ইকিলিক্স
১৮ আগস্ট ২০১২২০১০ সালে কয়েক হাজার মার্কিন গোপন নথি প্রকাশের পর থেকেই নাটকীয় সব ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন জুলিয়ান আসাঞ্জ৷ অস্ট্রেলিয়ার এই ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট সর্বশেষ চমকটি দেখালেন ইকুয়েডরে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়' পেয়ে৷ সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো পাটিনো বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আসাঞ্জ তাঁর দেশে আশ্রয় পাবেন৷
পাটিনোর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়া সরকারপন্থী সাংবাদিকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ কিন্তু সরকারের এই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন সেদেশের বিরোধী দল৷ ইকুয়েডরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনিও পিরা গিল বলেছেন, রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় ইস্যুতে আশ্রয় প্রদান যৌক্তিক হতে পারে, কিন্তু আসাঞ্জ নিছক সাধারণ অপরাধে অভিযুক্ত৷
যুক্তরাজ্য যাতে আসাঞ্জকে সুইডেনে ফেরত পাঠাতে না পারে, সেজন্য আট সপ্তাহ আগে লন্ডনস্থ ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় গ্রহণ করেন আসাঞ্জ৷ দূতাবাস ছেড়ে এখন দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটিতে আসাঞ্জ কিভাবে পৌঁছাবেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না৷ কেননা, এজন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রয়োজন৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য আইন মেনে আসাঞ্জকে সুইডেনে ফেরত পাঠাতে চায়৷ আইনজীবী রেবেকা নিবলক এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল আখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরবর্তীতে কি হবে সেটা বলা এখন অত্যন্ত কঠিন৷ মনে হচ্ছে আমরা এখন কানাগলিতে পৌঁছেছি৷''
এক্ষেত্রে হাঙ্গেরির একটি উদাহরণ উল্লেখ করেন এই আইনজীবী৷ তাঁর কথায়, ‘‘হাঙ্গেরির একজন ভিন্নমতাবলম্বী গত ১৫ বছর যাবত বুদাপেস্টে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান করছেন৷ তবে আমরা এটা বলতে পারি না যে, আসাঞ্জও একই কাজ করবেন৷''
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বুধবার অবশ্য প্রয়োজনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে জোর করে প্রবেশ করে আসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়৷ ব্রিটিশ আইনে একটি ভবনের কূটনৈতিক মর্যাদা অস্থায়ীভাবে বাতিলের সুযোগ রয়েছে৷ কিন্তু সরকারের এই হুমকিতে আতকে উঠেছেন সেদেশের কূটনীতিকরাই৷ তাঁদের শঙ্কা, ব্রিটিশ সরকার এরকম কিছু করলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সেদেশের দূতাবাস এবং পশ্চিমা দূতাবাসগুলো প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত টনি ব্রান্টান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার সন্দেহ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে যে এটা একটা ভুল হবে৷ দূতাবাস ভবনের উপর থেকে কূটনৈতিক-রাহিত্য বাতিলের ক্ষেত্রে প্রায়োগিক এবং আইনি বাধা রয়েছে৷ প্রায়োগিক বাধা হচ্ছে - রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি - এরকম কিছু করলে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একইধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কূটনীতিকদের কর্মকাণ্ড অনেক বেশি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে এবং সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার সাধারণ বিষয়াদি জটিল আকার ধারণ করবে৷''
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত এসংক্রান্ত আইনি দিকটিও ব্যাখ্যা করলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এসংক্রান্ত ভিয়েনা সনদ অত্যন্ত পরিষ্কার৷ সেটি হচ্ছে, একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ না করা পর্যন্ত সেদেশের দূতাবাস এলাকার উপর থেকে কূটনৈতিক-রাহিত্য প্রত্যাহার করা যাবে না৷''
আসাঞ্জ শেষ অবধি ইকুয়েডরে পৌঁছাতে পারবেন কিনা সে বিতর্ক ছাড়াও আরো একটি বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে৷ ইকুয়েডরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তেমন একটা নেই৷ সেদেশের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়াকে অনেকে গণমাধ্যমের শত্রু হিসেবে মনে করেন৷ এরকম একটি দেশে স্বাধীন এবং মুক্ত সাংবাদিকতার প্রতীক জুলিয়ান আসাঞ্জ দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারবেন কিনা, সেটাও বিবেচনার বিষয়৷ আপাতত অবশ্য রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েই খুশি তিনি৷ টুইটারে তাই তিনি লিখেছেন, ‘উদার ইকুয়েডর'৷
প্রতিবেদন: টোবিয়াস কাওফার / এআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ