1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসছে আইন, বন্ধ হবে নারীর চরিত্র নিয়ে  প্রশ্ন তোলা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ মার্চ ২০২২

বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইনের দুইটি ধারা প্রকারান্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র হননের সুযোগ করে দিয়েছে। তার সুযোগ নেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। সরকার আইনের এই দুইটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

https://p.dw.com/p/48hIy
Bangladesch Proteste gegen Vergewaltigung und sexuelle Belästigung von Frauen
ছবি: Sazzad Hossain/DW

এই আইনটি পাশ হলে ধর্ষণ মামলায় আদালতে নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে হেনস্থা করার সুযোগ থাকবে না। ধর্ষণ মামলায় বিচার পাওয়া সহজ হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের এই দুইটি ধারার সুবিধা নিয়ে আসামির আইনজীবীরা ধর্ষণের শিকার নারীকে এক অর্থে দ্বিতীয়বার আদালতে মৌখিকভাবে ধর্ষণের সুযোগ নেয়, যা একজন নারীর জন্য চরম অবমাননাকর। ট্রমার মধ্য দিয়ে যাওয়া নারীকে আরো গভীর ট্রমায় নিয়ে যায়। এই দুইটি আইন বাতিল হলে আদালতে নারীকে নতুন করে হেনস্থা হতে হবে না। ধর্ষণের মামলা প্রমাণও  অনেক সহজ হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান  জানান, ওই দুইটি ধারা হলো ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের  ১৫৫(৪) এবং ১৪৬(৩) ধারা। এই দুইটি ধারায় ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। ১৫৫(৪) ধারায় নারীর সাক্ষ্য নেয়ার সময় সরসরি তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। সেখানে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র, তার অতীত যৌন জীবন, সম্পর্ক- সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। এসব প্রশ্ন করে নারীকে শুধু মানসিকভাবে দুর্বলই নয়, তাকে খারাপ চরিত্রের বলে প্রমাণের চেষ্টা করে ধর্ষণ মামলার আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করার সুযোগ ওই আইনে দেয়া আছে। আর ১৪৬(৩) ধারায় জেরার সময়ও নারী ও পুরুষ উভয়কে চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। তবে আইনজীবীরা এটা নারীর ওপরই প্রয়োগ করেন। অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, " এই দুইটি ধারা ব্রিটিশ আমলের। এই আইন ধর্ষণ মামলার বিচারে বড় বাধা। কারণ, আইন দুইটির কারণে ঘটনা বাদ দিয়ে আদালতে আইনজীবীরা নারীর চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, দুশ্চরিত্রা প্রমান করতে পারলে আইনে আসামি সুবিধা পান। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে নারীকে নতুন মামলার ফাঁসিয়ে দেয়ারও সুযোগ আছে।”

এই আইন ধর্ষণ মামলার বিচারে বড় বাধা: ইশরাত

তার মতে, এই দুইটি ধারা বাতিল অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলে ধর্ষণের শিকার নারী বিচার দাবিতে আরো সাহসী হবেন। ওই আইনের কারণে কোনো কোনো নারী ধর্ষণের বিচার চাইতেই ভয় পান।

ধর্ষণের বিচার না হওয়ার একটা পুরুষতান্ত্রিক আইন: ফাতেমা

ধর্ষণ মামলার আইন ও এর নানা দিক নিয়ে গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা।  তিনি বলেন, " এই আইনটি বাতিল হলে আইনগতভাবে নারীর চরিত্র নিয়ে কথা বলার সুযোগ আর থাকবে না। এই আইনটির কারণে নারীর চরিত্র হননের সুযোগ আছে। আর মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে নারীর জীবনের ইতিহাস প্রকাশের প্রবণতা স্পষ্ট। এটা ধর্ষণের বিচার না হওয়ার একটা পুরুষতান্ত্রিক আইন।”

তবে তার মতে এই আইন বাতিলই যথেষ্ট নয়। তার কথা, " আমাদের সমাজ-ব্যবস্থায় ধর্ষণের মতো অপরাধকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি  করতে হবে। ধর্ষণের মামলা যে নারীর অতীত যৌন জীবনের ইতিহাস খোঁজা নয়, কার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বের করা নয়, এটা আমাদের বুঝতে হবে। একই সাথে ধর্ষণ মামলার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ও জরুরি।”

আইনটি নারীকে চরিত্রহীন প্রমাণের প্রবণতা উৎসাহিত করে: সালমা

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান অ্যডভোকেট সালমা আলী বলেন, "একজন যৌনকর্মীর সঙ্গেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বা সম্মতি ছাড়া কিছু করা যাবে না। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ওই আইন থাকায় যা হচ্ছে, তা হলো, আদালতে ধর্ষণের শিকার নারীকে চরিত্রহীন প্রমাণের প্রবণতাকে উৎসাহিত করে। কিন্তু কোনো একটি ঘটনাকে সেই ঘটনা দিয়েই বিবেচনা করতে হবে , তার অতীত চরিত্র, কার সঙ্গে কী সম্পর্ক সেটা দিয়ে নয়।”

তিনি বলেন, এই আইনটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কথা হচ্ছে। আদালতে রিট হয়েছে। আদালতও বলেছেন ওই আইন নারীর চরিত্র হননের সুযোগ করে দিয়েছে। আদালতও আইন বাতিল করতে বলেছেন। এখন সরকার তা বাতিলে উদ্যোগ নেয়ায় আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আইনের ওই দুইটি ধারা সংশোধন করা হবে। খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস হওয়ার পর সংসদে উত্থাপন করা হবে। কেউ আদালতে ধর্ষণের ভিকটিমদের চরিত্র নিয়ে যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে আইনে তার ব্যবস্থা করা হবে।