আশ্বাস মিলেছে, হবু শিক্ষকদের নিয়োগ কবে?
১১ আগস্ট ২০২২তিন বছর ধরে চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। ২০১৬-র এসএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ঠাঁই পাওয়া প্রার্থীরা এখনো চাকরি পাননি। এর প্রতিবাদে ২০১৯ সাল থেকে চলছে প্রতিবাদ। অবশেষে গত সোমবারের বৈঠকের পর একটু আশার আলো দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর তৃণমূল দলীয় তরফে চাকরিপ্রার্থীদের কথা শুনতে উদ্যোগী হয়। নবম থেকে দ্বাদশের মেধাতালিকায় থাকা হবু শিক্ষকরা ২৯ জুলাই কথা বলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ছিলেন। তারপর তিনি সরাসরি কথা বলেছেন প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থীদের আট প্রতিনিধির সঙ্গে।
বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা মেধাতালিকা অনুযায়ী সকলের নিয়োগের দাবি তুলেছেন। এই দীর্ঘ প্রতিবাদের পর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সুযোগকে নৈতিক জয় হিসেবে দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সূত্রের খবর, বৈঠকের মধ্যে দুই চাকরিপ্রার্থী কেঁদেও ফেলেন। মেধাতালিকা অনুযায়ী ছয় হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। আন্দোলনকারীরা প্রত্যেকের নিয়োগের দাবি রাজ্য সরকারের কাছে করেছেন।
যদিও বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যা বলেছেন, তা নিয়ে শিক্ষা মহলে নিয়োগের ব্যাপারে ধোঁয়াশা জিইয়ে রয়েছে। তাঁর মন্তব্য, "চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের দাবি আইনিভাবে খতিয়ে দেখা হবে। এর জন্য আরো পদ তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত পদ তৈরি করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন চাই।” মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী আপাতত বল স্কুল সার্ভিস কমিশনের কোর্টে বল। শিক্ষা দফতর তাদের কাছে জানতে চেয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের দাবি খতিয়ে দেখে অতিরিক্ত কত পদ তৈরি করা দরকার। এই সংখ্যা নির্ণয়ের পর পরবর্তী স্তর অর্থাৎ মন্ত্রিসভা ও অর্থ দফতরের অনুমোদনের দিকে বিষয়টি যাবে। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, অতিরিক্ত পদের সংখ্যা নির্ধারণের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হবে।
প্রশ্ন উঠছে, অর্থ দফতর কতগুলি নতুন পদ তৈরিতে অনুমোদন দেবে? রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কেন্দ্রীয় অনুদান বাবদ বিপুল বকেয়া রয়েছে বলে নবান্নের দাবি। তার উপর একের পর এক জনমুখী প্রকল্প চালানোর খরচ রয়েছে। তবুও আশায় বুক বাঁধছেন অবস্থানকারী হবু শিক্ষকরা। ধর্মতলার মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ৫১৪ দিনের বেশি অবস্থান করছেন তারা। প্রতিবাদীরা জানিয়েছেন, নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে। সোমবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া পলাশ মণ্ডল, শহিদুল্লাহ, মিঠুন বিশ্বাস, ইলিয়াস বিশ্বাসরা আশাবাদী, এবার নিয়োগের সুরাহা হতে পারে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের মাথাব্যথা বাড়িয়ে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক সাহাকে। প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী এই দুজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, এই দুই অভিযুক্তের বাড়ি থেকে নথিপত্র উদ্ধার হলেও সেই সংক্রান্ত তদন্তে তারা সহযোগিতা করছিলেন না। কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ধৃত এই দুই আধিকারিক প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ।
দুর্নীতির মামলায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে বলে মত শিক্ষা মহলের। শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার বলেন, "রাজ্যের বহু স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। শিক্ষক না থাকলে পড়ুয়াদের কী অবস্থা হয়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা ঠিকভাবে তৈরি হতে পারছে না।” সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিয়োগ নিয়ে মামলা থাকায় প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হচ্ছে। এই অভিযোগ খারিজ করে ড. সরকারের মন্তব্য, "শিক্ষক নিয়োগের পথে আইনি বাধা নেই, এটা আদালত জানিয়ে দিয়েছে। তাই নিয়োগে টালবাহানা হলে প্রশ্ন উঠবে, কেন দেরি হচ্ছে। পড়ুয়াদের স্বার্থে নিয়োগে আর দেরি করা উচিত নয়।”