1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনার কেন্দ্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

১৫ ডিসেম্বর ২০২২

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে নিয়ে বাংলাদেশে এখন তুমুল আলোচনা৷ রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে৷

https://p.dw.com/p/4KzSK
প্রতীকী ফাইল ফটো
প্রতীকী ফাইল ফটোছবি: imago/Roland Mühlanger

আর এই আলোচনার মূলে আছে নিখোঁজ এক বিএনপি নেতার বোনের বাসায় রাষ্ট্রদূতের গমন৷

নিখোঁজদের স্বজনদের সংগঠন "মায়ের ডাকের” সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার সকালে ঢাকার শাহীনবাগের একটি বাসায় যান৷ ওই বাসায় ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি থাকেন৷

তিনি যখন সকালে ওই বাসায়  যান তখন সেখানে "মায়ের কান্না” নামে আরেকটি সংগঠনের সদস্যরাও ওই বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন তাকে স্মারক লিপি দেয়ার জন্য৷ মায়ের কান্না হলো ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিদ্রোহ দমনের নামে বিমানবাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ৷

শাহীনবাগের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অবস্থান এবং বের হওয়ার পর স্মারকলিপি দেয়া নিয়ে তখন ওই এলাকায় অস্বাভাবিক ও ধ্বস্তাধস্তির মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে সেখান থেকে দ্রুত বের করে নিয়ে যান৷ ওই বাসায় তিনি ২৫ মিনিট অবস্থান করেন৷ বের হয়ে যাওয়ার পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জরুরি ভিত্তিতে পরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে তিনি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,"তিনি যে ওখানে গিয়েছেন তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা ছিল না৷ মার্কিন দূতকে জানিয়েছি আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের ৷ মার্কিন দূত অধিকতর নিরাপত্তা চাইলে আমাদের সরকার সে ব্যবস্থা করবে৷ তিনি ওখানকার ঘটনায় খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন৷”

মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দুই দল

ওই ঘটনার পর বুধবার বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের  বলেন, "আজ সকালে দেখলাম ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস৷ আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস৷ রাষ্ট্রদূত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে বেশি খুশি হতাম৷ আমরা কিন্তু সিএনএনে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কত মানুষ গুম হয়, কত নারী ধর্ষিত হয়, কত মানুষ খুন হয়৷”

‘এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি’

আর একদিন পর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অভিযোগ করেছেন,"মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে প্রমাণ করে এর সঙ্গে তারা জড়িত৷ তারাই উসকানি দিয়ে, সেখানে লোক পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী গাড়িতে আঘাত করিয়েছে৷ রাষ্ট্রদূতকে হেনস্তা করা হয়েছে৷ এর আগেরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে এই সরকারের নির্দেশে হামলা করা হয়েছে৷”

মার্কিন প্রতিক্রিয়া

এদিকে বৃহস্পতিবার মার্কিন দূতাবাসের এক এক টুইট বার্তায় বলা হয়, ‘‘মর্কিন দূত পিটার হাস ‘মায়ের ডাকে'র সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের কথা শোনার জন্য৷ বিশ্বে যারা গুমের  শিকার হয়েছেন তারা ও তাদের পরিবারের পাশে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷''

দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার  জনানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে রয়েছে মানবাধিকার৷ রাষ্ট্রদূত হাস মায়ের ডাক-এর সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন হচ্ছে মায়ের ডাক, সেখানে রাষ্ট্রদূত ওই পরিবারের সদস্যদের কথা শুনেছেন৷

আর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র বলেন, বাইডেন প্রশাসন তার মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর এবং বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও প্রগতি এগিয়ে নিতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে স্বীকৃতি দেয়৷ আমাদের দুইপক্ষের সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে মানবাধিকার৷ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সময় দেশটির স্বাধীন গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকলে তা আমরা উল্লেখ করে থাকি৷ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর একটি বৈঠক তাড়াতাড়ি শেষ করতে করে৷ আমরা আমাদের এই উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি৷

কূটনীতিবিদেরা যা বলেন

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক বলেন,"মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যা ঘটে গেল তা দুঃখজনক৷  এর আগেও একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা হয়েছে৷”

তিনি জানান," সাধারণ নিয়মে আমি রাষ্ট্রদূত থাকাকালে যে শহরে  থাকতাম নেই শহরের মুভমেন্ট বা বা কোনে কাজে গেলে সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতাম না৷ শহরের বাইরে গেলে জানাতাম৷ এটাই সাধারণত ফলো করা হয়৷ ”

তিনি বলেন," ডিপ্লোম্যাটিক পুলিশ তো আছে৷ তারা তো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন৷ তাদের বিষয়টি দেখা উচিত ছিলো৷ আর যেখানে ঘটনা সেখানে তো পুরিশ দেখেছি৷ একটি ব্যানারও দেখেছি৷ তারা তো আগে থেকেই জড়ো হওয়া লোকজনকে সরিয়ে দিতে পারতেন৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," পলিটিক্যাল লোকজনের সঙ্গে  দেখা করা ডিপ্লোম্যাটিক নর্মসের বাইরে না৷ আমাদের সিলেকটিভ হলে চলবে না৷ ভারতীয় রাষ্ট্রদূততো সবখানে যাচ্ছেন৷”

আর সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন," বিদেশি কূটনীতিকরা কখন কোথায় যাবেন তা সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ আমি নিজে তো জানিয়ে যেতাম না৷ তবে পদ্ধতির কারণে সেটা সবাই জানে এবং গোপন রাখা যায় না৷ কারণ নিরাপত্তার লোক থাকে তারা জানে৷ সুতরাং তখন আর সেটা কারো অজানায় থাকে না৷ গোয়েন্দা সংস্থাও জানে৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন," এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি৷ এমনকি মানবাধিকারের বিষয়েও আমরা দুই ভাগ হয়ে গেছি৷”

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল এক দল সশস্ত্র যুবক৷