1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলবেনিয়ার অনুন্নত এলাকার জন্য আশার আলো

৯ ডিসেম্বর ২০২০

ইউরোপের দেশ হলেও আলবেনিয়া অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে উন্নয়নের অভাবে সেখানকার গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ এক এনজিও বিকল্প জীবিকার সুযোগ দেখিয়ে মানুষের মনে আশার আলো জ্বালানোর চেষ্টা করছে৷

https://p.dw.com/p/3mST1
আলবেনিয়ার কোরাব পর্বতমালার পাদদেশে একটি গ্রাম
আলবেনিয়ার কোরাব পর্বতমালার পাদদেশে একটি গ্রামছবি: DW

প্রতিটি ছবির মাধ্যমে আলবেনিয়ার সৌন্দর্য তুলে ধরতে চান ওলসিয়ন লামা৷ নিসর্গের প্রচুর ছবি তুলে তিনি যেন পাহাড়ের মানুষগুলির কাছে প্রমাণ করতে চান, যে তারা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জগতে বসবাস করে৷ আলবেনিয়ার সবচেয়ে বড় পরিবেশ সংক্রান্ত এনজিও-র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি স্থানীয় মানুষকে আশার আলো দেখাতে চান, যাতে তারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে না যায়৷

আয়ের নতুন উৎস

পাহাড়ের পাদদেশের এক বুদ্ধিমান মালি তাঁকে সেই পথ দেখিয়েছেন৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এই পথ আকর্ষণীয় হতে পারে৷ কষ্ট করে পাহাড়ে খোঁজ করার বদলে নিজেরাই এমন বেরি চাষ করলে কেমন হয়? ওলসিয়ন লামা নিশ্চিত যে এমন প্লান্টেশন মানুষের আয়ের পথ খুলে দিতে পারে৷

মালি হিসেবে জিয়া কেশি আদর্শ এক মানুষ৷ কেশি অনেক বছর ইটালিতে মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন৷ সঞ্চয়ের অর্থ বিনিয়োগ করে তিনি পাঁচ বছর আগে আরোনিয়া বেরি চাষ শুরু করেন৷ আলবেনিয়ার পূর্বে কোরাব পর্বতমালার পাদদেশে সেই কাজে সাফল্যও পেয়েছেন তিনি৷ ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি এমনকি জার্মানির এক অরগ্যানিক সার্টিফিকেটও পেয়েছেন৷ ফলে তিনি অত্যন্ত গর্বিত৷ জিয়া বলেন, ‘‘এখানে আমি কোনো সার ব্যবহার করি না৷ উপরে জঙ্গলে যেমন পরিবেশ, এখানেও তাই৷ মাটিতে ব্যাকটিরিয়া, হামাসের কারণে গাছগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷’’

আলবেনিয়ার গ্রামে মানুষ কমে যাচ্ছে

কেশিকে বিপণনের কথা ভাবতে হয় না৷ খামারেই সব ফসল বিক্রি হয়ে যায়৷ বিশেষ করে পরীক্ষানিরীক্ষার কারণেই তাঁর এই সাফল্য৷ যেমন কিউবার রেডলাভ আপেল গাছ লাগিয়ে খুব লাভ হয়েছে৷ এমনকি চীন থেকে আনা গোজি বেরিও দিব্যি বেড়ে উঠছে৷ কেউ সেই পথে এগোতে চাইলে তাঁর কাছে অনেক চারাগাছও রয়েছে৷

সাধারণ মানুষের উপকারের উদ্যোগ

ওলসিয়ন লামা পাহাড়েও এমন আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে চান৷ তিনি নিয়মিত স্থানীয় বনকর্মী, পশু চিকিৎসক ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ তাঁরা পাহাড়ের ক্ষুদ্র চাষিদের ঋণ বা পশু কেনার বিষয়ে পরামর্শ দিতে চান৷ কিছু জায়গায় বোর্ড টাঙিয়ে ও তথ্যের কিয়স্ক তৈরি করেও প্রায় কারও আগ্রহ জাগানো গেল না৷ করোনার ঝুঁকির কারণে ট্রেকাররা পাহাড় এড়িয়ে চলেছেন৷ বর্তমানে আলবেনিয়া প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে৷ ফলে পাহাড়ের উপর মানুষ ও প্রাণী নিজেদের মধ্যেই রয়েছে৷ চারিদিকে সহজসরল জীবনযাত্রার ছাপ৷

বিক্রিবাটা কমে গেলেও মেষপালক হিসেবে আমরি ফিদা সেখানেই থেকে গেছেন৷ অনেক সমবয়সি সতীর্থ সেখান থেকে চলে গেছে৷ এনজিও-প্রতিনিধি লামা সবকিছু নথিভুক্ত করছেন এবং মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার কথা শুনছেন৷ তারা বলছে, চারণভূমি কমে চলেছে, মেষপালকের সংখ্যাও কমছে৷ এর পরিণতি হিসেবে পাহাড়ে চারণক্ষেত্র শুকিয়ে যাচ্ছে৷ লামা বলেন, ‘‘প্রতি বছর ভেড়ার সংখ্যা কমে চলেছে এবং চারণক্ষেত্র ঝোপঝাড়ে ভরে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন চারণভূমি হারানো তাদের জন্য কঠিন সমস্যা৷’’

আলবেনিয়ার কোরাব পর্বতমালার পাদদেশে একটি গ্রাম
আলবেনিয়ার কোরাব পর্বতমালার পাদদেশে একটি গ্রামের বাসিন্দাছবি: DW

পাহাড়ের জীবনযাত্রার আকর্ষণ

আমরির পরিবার গ্রীষ্মের শেষ মাসগুলি পাহাড়ের উপরেই কাটিয়েছে৷ শীতের সময়ে তারা আবার নীচে গ্রামে চলে যাবে৷ আমরির মা আর ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করেন না৷ সে মায়ের কাছ থেকে শিখেছে, যে তার জীবন শহুরে মানদণ্ডে মনোরম না হলেও একশো বছর আগে পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেক ভালো হয়ে উঠেছে৷ আমরি বলেন, ‘‘আমার বড় গাড়ি থাকলে ভালই হতো৷ আমি কি প্রকৃতির মাঝে এখানকার স্বাভাবিক জীবন ভালবাসি? আমাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ বড় শহরে কিন্তু এমন পরিবেশ পাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়৷’’

ওলসিয়ন লামা বলেন, ‘‘আগামী বছরগুলিতে আমরা এই অনুভূতি আরও শক্তিশালী করে তুলতে চাই৷ তারা যাতে এখানে থেকেও উপকৃত হতে পারে, সেটা সম্ভব করতে হবে৷’’

আমরি ফিদার পরিবারের মনে সম্ভবত কোনো সংশয় নেই৷ পূর্বপুরুষদের তৈরি সাধারণ কুটিরের পাশে তাদের আরও ভালো পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে৷ নতুন প্রজন্ম সাফল্যের মুখ দেখছে৷

হলগার ত্রেসাক/এসবি