টিভি প্রযুক্তি
১৬ জানুয়ারি ২০১২মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে সম্প্রতি আয়োজন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো, সিইএস৷ এরকমই এক প্রদর্শনীতে ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয় এইচডিটিভি৷ টেলিভিশনকে আরো বেশি জীবন্ত করে তুলেছে এই প্রযুক্তি৷ কিন্তু সেটা পুরোমাত্রায় বাজারে আসতে লেগেছিল আরো পাঁচ-ছয়বছর৷ ২০০৯ সালে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি নির্ভর টিভি প্রদর্শন করা হয় সিইএস'এ৷
বলাবাহুল্য, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশনে এখনো মূলধারার ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়নি৷ তবুও এই প্রযুক্তি'র উন্নয়ন টেলিভিশন নির্মাতাদের খানিকটা আশ্বস্ত করেছে৷ অন্তত টেলিভিশনের গুরুত্ব কমেছে না৷ কেননা, যেহারে স্মার্টফোন, আইপ্যাড, নোটবুক, ল্যাপটপের জোয়ার দেখা দিয়েছে, সেখানে টেলিভিশনের চাহিদা কতদিন আর থাকে তাও দেখার বিষয়৷ যেমনটা এখন বলতে গেলে, ডেস্কটপ বসতভিটা থেকে উধাও হতে চলেছে, টেলিভিশনের ভাগ্যও যদি এমন হয়?
টেলিভিশনকেও তাই টিকে থাকতে হচ্ছে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে৷ এজন্য চাই নতুনত্ব৷ তাহলে এইচডি কিংবা থ্রিডি'র পরও চাই নতুন চমক৷ সেটা কী হবে?
যা কিছু নতুন
লাস ভেগাসের প্রদর্শনীতে টেলিভিশনে নতুন কিছু সংযুক্তি দেখা গেছে৷ যেমন, এটি সর্বদা ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবে, আপনার ট্যাবলেট জাতীয় প্রযুক্তি পণ্যের সঙ্গে তারহীন যোগাযোগ থাকবে টেলিভিশনের সঙ্গে, এমনকি টিভিতে থাকছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারের সুবিধা, যাতে কোন অনুষ্ঠান দেখতে দেখতেই আপনি ফেসবুক-টুইটারে মন্তব্য করতে পারেন৷ আর রিমোট কন্ট্রোলটিও হয়ত হারিয়ে যাবে ভবিষ্যতে, তখন কথা বলে কিংবা হাত-পা নাড়িয়ে টিভিকে দেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা৷
ওএলইডি টেলিভিশন
প্রদর্শনীতে আরো যে বিষয়টি নিয়ে খুব উৎসাহ দেখা গেছে, সেটি হচ্ছে প্লাজমা বা লিকুইড ক্রিস্টাল নয় বরং ওএলইডি টেলিভিশন পর্দা৷ সহজে করে বলতে গেলে, ওএলইডি ব্যবহার করে তৈরি টেলিভিশন পর্দায় ছবিগুলো আরো নিখুঁত এবং গভীরভাবে ফুটে ওঠে৷ কিছু উন্নত স্মার্টফোনে ইতিমধ্যে ওএলইডি মনিটর ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ তবে এই পদ্ধতিতে টেলিভিশনের মত বড় পর্দা তৈরি এখনো এক কঠিন কাজ৷ অবশ্য এলজি ইলেকট্রনিক্স সেই অসাধ্য সাধন করেছে৷ সিইএস'এ সংস্থাটি প্রদর্শন করেছে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা, বড় এবং হালকা ওএলইডি টিভি৷ ৫৫ ইঞ্চি আকারের এই টেলিভিশন দেখে সবাই একটি শব্দই বলেছেন, ওয়াও!
অবশ্য, স্যামসাংও বেশি দেরি করেনি৷ সেই একই উৎসবে সংস্থাটি ৫৫ ইঞ্চি ওএলইডি টেলিভিশন হাজির করেছে৷ এবং দুটো সংস্থারই প্রত্যাশা চলতি বছর মানে ২০১২ সালের মধ্যেই বাজারে আসবে ওএলইডি নির্ভর টেলিভিশন৷ সেই টিভি'র দাম কতটা হবে তা অবশ্য বলে নি কোন সংস্থাই৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা কম করে হলেও আট হাজার মার্কিন ডলার দাম হবে এই টেলিভিশনের৷ এন্ড্র ইশনার নামক একজন প্রযুক্তি পণ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অধিকাংশ সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকবে ওএলইডি টিভি৷ তবে এটি সত্যিই চমৎকার এক পণ্য৷
কথা চালিত টিভি
স্যামসাং প্রদর্শনীতে কথা চালিত টেলিভিশনও প্রদর্শন করেছে, যেটি ‘চ্যানেল টু' বললে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই চ্যানেলে চলে যাবে৷ এই টিভিতে রয়েছে বিল্ট-ইন ক্যামেরা, মাইক্রোফোন৷ ফলে অঙ্গভঙ্গি মানে ইশারাতেও নাকি চলবে এটি৷ প্রযুক্তির কী বাহার দেখুন, অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে তাতে আবার ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুবিধাও থাকছে৷ শুনে মনে হচ্ছে, ল্যাপটপের সঙ্গে প্রতদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে এই টিভি৷
ইন্টারনেটবান্ধব টেলিভিশন
সিইএস'এ প্যানাসনিক প্রদর্শন করেছে ইন্টারনেটবান্ধব এক টেলিভিশন৷ এটি আবার আপনার ফেসবুক-টুইটারের হোম পেজ থেকে বিভিন্ন বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখাতে পারে৷ এমনকি এই টিভি'র পর্দা মাঝখান থেকে দু'ভাগ করা যাবে, তখন একপাশে টিভি চলবে, অন্যপাশে স্কাইপ ব্যবহার করে চ্যাটিং৷
এককালের ঢাউস সাইজের টেলিভিশন এখন ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে পাতলা টেলিভিশনও বাজারে এসে গেছে৷ সেটি তৈরি করেছে এলজি, মাত্র ৪ মিলিমিটার মোটা বা পাতলা এই টেলিভিশন৷ এরচেয়ে পাতলা কী আর সম্ভব বলুন!
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম