আরব বসন্তের পাঁচ বছর
১৪ জানুয়ারি ২০১৬বেন আলি ২৩ বছর ধরে টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ তাঁকে যে প্রতিবাদের জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তার ছোঁয়া লাগে একের পর এক আরব দেশে, সব মিলিয়ে যার নাম দাঁড়ায় আরব বসন্ত৷
বসন্ত মানে আশা, আকাঙ্খা, উদ্দীপনা৷ কিন্তু আরব বসন্ত নিয়ে সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকরা আজ যখন লেখেন, তখন তারা যেন খরগ্রীষ্ম কিংবা শীতেরই ছোঁয়াচ পান৷ কেননা আরব বসন্ত আশাপূরণের পরিবর্তে আশাভঙ্গের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
‘দ্য ইকনমিস্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি মানচিত্র এখন বার বার রি-টুইট হচ্ছে, আয়ান ব্রেমার যেমন করেছেন৷ মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে আরব বসন্তের পাঁচ বছর পরে আরব দুনিয়ার পরিস্থিতি: একটি দেশ – টিউনিশিয়ায় – গণতন্ত্র বজায় আছে; নয়ত পাঁচটি দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম ও তিনটি দেশ বস্তুত ‘ফেইল্ড স্টেট' বা ব্যর্থ রাষ্ট্র, যারা রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম৷ অর্থাৎ আরব বসন্তের সামগ্রিক খতিয়ান খুব গৌরবজনক নয়৷
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
লিবিয়ায় ন্যাটোর সাহায্যপুষ্ট সশস্ত্র বিপ্লবে মুয়ম্মর আল-গদ্দাফিকে বিতাড়ন ও হত্যা করা সম্ভব হলেও, তারপর শুধুমাত্র সংঘাত ও রাজনৈতিক অরাজকতা চলেছে৷ ইয়েমেনেও দীর্ঘকালের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ গণপ্রতিবাদের মুখে সরে দাঁড়ান৷ তাঁর উত্তরসূরি আবেদরাব্বো মনসুর হাদিকে হুথি বিদ্রোহীদের ভয়ে রাজধানী ছেড়ে পালাতে হয়৷ আপাতত সৌদি আরব ও তার সহযোগীরা ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে৷
আরব বসন্তের ব্যর্থতার একটি দিক হলো জনগণের আশা পূর্ণ না করতে পারা৷ অপরদিকে সিরিয়া বা ইরাকের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে আরব বসন্তের আর একটি বিভীষণ ফলশ্রুতি চোখে পড়বে, যার নাম হলো ইসলামি জঙ্গিবাদ, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট যার সবচেয়ে বড় প্রতিভু৷ ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে এই বিকাশধারাটি দেখতে পাওয়া যাবে ক্রিস্টিন ডেভিডসনের টুইট করা একটি কার্টুনে৷
বস্তুত আরব বিশ্বে যা কিছু ঘটছে, তার সঙ্গে আরব বসন্তের কোনো না কোনো সংযোগ খুঁজে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা৷ যেমন ‘কোয়ার্ৎস' টুইট করেছেন: ‘ইরান-সৌদি আরব সংকট আরব বসন্তের রক্তাক্ত উত্তরাধিকারের প্রমাণ৷'
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পরে বাকি বিশ্বের মনোভাব কী হওয়া উচিত, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে ডেভিড জোন্স-এর টুইটে: ‘আরব বসন্ত যে সুশাসন আনতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা বিয়োগান্ত৷ কিন্তু আমাদের আরব বসন্তের আদর্শগুলিকে সমর্থন করে যেতে হবে৷'
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
বন্ধুরা, আরব বসন্তের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় দিক কোনটা? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷