1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

আরজি করের রায়ের দিনই বাসন্তীতে 'ধর্ষিতা' কিশোরীর দেহ উদ্ধার

২১ জানুয়ারি ২০২৫

সোমবার আরজি কর মামলার রায় হলো। সেদিনই বাসন্তীতে উদ্ধার হলো ধর্ষিতা ও খুন হওয়া কিশোরীর বিবস্ত্র দেহ।

https://p.dw.com/p/4pQHk
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় প্রতিবাদ।
এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও পশ্চিমবহ্গে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

সোমবার বাসন্তী থানা এলাকায় চাষের জমিতে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় কিশোরীর বিবস্ত্র দেহ পাওয়া যায়। ১০ দিন ধরে সে নিখোঁজ ছিল। থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়।

পরিবারের বক্তব্য

পরিবারের দাবি, কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। খুন করেছে এলাকারই বাসিন্দা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নামে এক যুবক। গত ১০ জানুয়ারি নিখোঁজ হওয়ার আগে শেষবার এর সঙ্গেই দেখা গিয়েছিল কিশোরীকে। বুদ্ধদেবের সঙ্গে দীপেন কয়াল নামে আর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার বাড়ির কাছে একটা জলাজমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষের প্রস্তুতি চলছিল। তখন ট্রাক্টরচালক মাটির উপরে একটা হাত দেখতে পান। খবর পেয়ে প্রচুর মানুষ জড়ো হন। পুলিশ আসে। তাদের স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। কিশোরীর দেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশের দাবি, রিপোর্ট আসার পর তদন্তের কাজে গতি আসবে।

এলাকার বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা যেন ছাড়া না পায়। তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসাবে ধরা হয়।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ২০২২ সালে সারা দেশের অপরাধ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে ২০২৪ সালে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশে মেয়েদের বিরুদ্ধে চার লাখ ৪৫ হাজার ২৫২টি অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়। তার মধ্যে সাত দশমিক এক শতাংশ হচ্ছে ধর্ষণ।

মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান চার নম্বরে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের পরেই। পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের বিরুদ্ধে ৩৪ হাজার ৭৩৮টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

আরজি করের ঘটনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি-বিতর্ক

সেমবারই আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে রায় দিয়েছেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বান দাস। তিনি একমাত্র অভিয়ুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারক নির্দেশনামায় লিখেছেন, "সুপ্রিম কোর্ট ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়ে বলেছে মৃত্যুদণ্ড শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত। যেখানে সমষ্টিগত বিবেক আহত হয়, তখন তা বিচার বিভাগকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বাধ্য করে।"

আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের নৃশংস হত্যার পর সমষ্টির যে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল, তা এককথায় অভূতপূর্ব। শুধু রাজ্য বা দেশ নয়, বিদেশেও ধ্বনিত হয়েছিল প্রতিবাদ। এই যৌথ ও ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও কেন সর্বোচ্চ সাজা আদালত দিল না?

১৭২ পাতার আরজি কর রায়ে বিচারক লিখেছেন, "বিচারবিভাগের প্রাথমিক দায়িত্ব, জনমতের উপরে নির্ভর করে নয়, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। বিচারের সময় তথ্যপ্রমাণের উপর জোর দিয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।"

নির্দেশনামাতেই বিচারক বলেছেন, "সিবিআই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুমতি চেয়েছে। ফলে ঘটনার পিছনে আর কেউ বা কিছু নেই, এই উপসংহারে না পৌঁছে আদালত আগামী দিনে দেখতে চায়, তদন্ত কতদূর এগোয়।

পুলিশ, সিবিআই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা

রায় দিতে গিয়ে শিয়ালদা আদালতের বিচারক সিবিআই, পুলিশ ও আরজি কর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন।

নির্দেশে সিবিআই সম্পর্কে বিচারক লিখেছেন, "এই মামলা ইলেকট্রনিক্স, সায়েন্টিফিক এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপর দাঁড়িয়ে। এক্ষেত্রে তদন্তকারীদের আরো প্রশিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।"

রায়ে বলা হয়েছে, "টালা থানা যেখানে তদন্ত শেষ করেছে, সিবিআই দায়িত্ব নিয়ে সেই অনুযায়ী তদন্ত করেনি।"

পুলিশ সম্পর্কে বিচারক বলেছেন, "টালা থানা যদি প্রথম থেকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পদক্ষেপ করত, তাহলে বিষয়টা জটিল হত না। থানা তদন্তে নির্বিকার ছিল। এর ফলে মামলার মেরিট নষ্ট হয়েছে।"

নির্ভয়া ও আরজি করের মামলার বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে: রঞ্জিত শূর

আরজি কর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বিচারক লিখেছেন, "তদন্তকারী অফিসারের ত্রুটি বা পুলিশ ও হাসপাতালের গাছাড়া ভাব যদি মামলা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, বিচার বিভাগ তা এড়াতে পারে না। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কেন নিজে এফআইআর করেননি, কেন নিহতের বাবা-মাকে সেমিনার রুমে আগে ঢুকিয়ে মেয়েকে দেখতে দেয়া হয়নি, এইসব প্রশ্নের জবাব সন্তোষজনক নয়। 

সম্প্রতি রাজ্যের তিনটি মামলায় ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জয়নগর, মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ও হুগলির গুড়াপে ধর্ষণ ও খুনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। তবে এগুলির ক্ষেত্রে নিহত হয়েছিল নাবালিকারা। মামলা হয়েছিল পকসো আইনে।

মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, "আইনের বইতে কী লেখা আছে শুধু তা দিয়ে নয়, বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি রায়দানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্ভয়া ও আরজি করের মামলার বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে। নির্ভয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীরা সব চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল, সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কিন্তু আরজি কর মামলায় সেটা রয়েছে, তা বিচারপতি রায়দানের সময় উল্লেখ করেছেন।"

হাইকোর্টে আবেদন

নিম্ন আদালত সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা না দেয়ায় অসন্তোষ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিতর্ক

আরজি করের মতো বাসন্তীর ঘটনাতেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। কিন্তু ঘটনা হলো, এই দাবি ওঠা ও তা কার্যকর হওয়ার মধ্যে বিশাল ফারাক আছে।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ''আদালত রায় দেয় আইন অনুসারে এবং তদন্তকারীরা যে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে তার উপর নির্ভর করে। এখানে কে কী চাইছে সেটা বড় কথা নয়। তদন্তকারীরা কীভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতের কাছে এনে দিচ্ছে, সেটাই বড় কথা। তার উপর ভিত্তি করেই শাস্তি হয়। এই যে একের পর এক ধর্ষণ ও খুন হচ্ছে, সেটা ঠেকানো সরকারের দায়িত্ব। কেউ মৃত্যুদণ্ড চাইলো কিনা সেটা বড় কথা নয়। দোষীদের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করাটা হলো তদন্তকারীদের দায়িত্ব। তার উপরে ভিত্তি করেই তো রায় হবে।'' 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷