আমাদের পানীয় জল আসলে কতটা নিরাপদ?
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ওয়াটার স্পোর্টস অনুরাগী, পথিক ও পর্যটক – সবার কাছে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সুইশেনআনার মেয়ার হ্রদ স্বর্গরাজ্যের মতো৷ কিন্তু সেখানেই মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু পাওয়া গেছে৷ সেই এক্সটেন্ডেড স্পেকট্রাম বিটাল্যাকটামেস বা ইএসবিএল জীবাণু এবং মাল্টিড্রাগ-রেজিস্টেন্ট গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বা এমআরজিএন একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে৷
সেই জীবাণু মূত্রাশয় বা ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে – এমনকি রক্তে বিষক্রিয়াও ঘটাতে পারে৷ এই ধরনের জীবাণু সাধারণত এমন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বড় মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় – যেমন হাসপাতাল বা পশুখামার৷
জলাশয়েও তাদের চিহ্ন পেয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী প্রো. ইয়োহানেস ক্নোবলখ-এর মতো বিশেষজ্ঞরা মোটেই বিস্মিত হননি৷ তবে তাঁরা এমন ধরনের জীবাণু আশা করেননি৷ সব রকম অ্যাকটিভ সাবস্ট্যান্স ব্যর্থ হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে যে জীবাণু ব্যবহার করা যায়, হ্রদের পানিতে সেটি পাওয়া গেছে৷ প্রো. ক্নোবলখ বলেন, ‘‘জার্মানিতে রোগীদের শরীরে এই ধরনের রেজিস্টেন্স এখনো অত্যন্ত বিরল৷ তা সত্ত্বেও আমাদের মনে এ সম্পর্কে চরম ভীতি কাজ করে৷ কীভাবে সেগুলির প্রসার ঘটে, তা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করি৷ আগামী কয়েক বছরে এ ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন হবে৷''
ক্নোবলখ হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি বিভাগের প্রধান৷ শোধনাগারগুলি মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু কতটা নিষ্ক্রিয় করতে পারে, ২০১৭ সাল থেকে এক গবেষণামূলক প্রকল্পের আওতায় তিনি সেই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
অনেক প্লান্ট এমন জীবাণু আংশিকভাবে ছেঁকে নিতে পারে৷ ফলে সেই জীবাণু বিশেষ করে হাসপাতাল বা পশুখামারের কাছের পানিতে পৌঁছে যায়৷ বিশেষ করে প্রবল বৃষ্টিপাতের পর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ কারণ বৃষ্টির পানির সঙ্গে কখনো প্রাণিজ সার ও অপরিশোধিত নর্দমার পানি সরাসরি নদীনালা ও হ্রদে পৌঁছে যায়৷
পাখি ও বন্য প্রাণীরাও মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু বহন করে পানিতে নিয়ে আসে৷ তবে সৌভাগ্যবশত বেশিরভাগ জীবাণু বেশি সময় পানিতে জীবিত থাকতে পারে না৷ কিন্তু তার ফলে সমস্যার সমাধান হয় না৷ প্রো. ইয়োহানেস ক্নোবলখ বলেন, ‘‘রেজিস্টেন্স উধাও হয় কিনা, সে বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত নই৷ ব্যাকটেরিয়া নিজেদের মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি আদানপ্রদানের ক্ষমতা রাখে৷ ফলে কোনো একদিন রেজিস্টেন্সের জেনেটিক তথ্য এমন ব্যাকটেরিয়ার কাছে ফেরত যেতে পারে, যারা মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে৷''
অন্য প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রেজিস্টেন্স হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার ফলে রোগের এমন প্যাথোজেন সৃষ্টি হতে পারে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই যাকে কাবু করতে পারবে না৷ যত বেশি প্রতিরোধী জীবাণু পানিতে থাকবে, তাদের মধ্যে আদানপ্রদানের ঝুঁকিও ততটা বাড়বে৷
এখনো পর্যন্ত নদীনালা বা হ্রদে তাদের পরিমাণ যথেষ্ট কম৷ কিন্তু বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া কি সেখান থেকে পানীয় জলেও মিশে যেতে পারে?
বর্তমানে জার্মানিতে পানীয় জলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নদীনালা, হ্রদ ও বাঁধ থেকে আসে৷ পানীয় জল সরবরাহকারী সংস্থাগুলি ক্ষতিকর জীবাণুর প্রবেশ রুখতে ওজোন ও অতিবেগুনি রশ্মি প্রয়োগ করে এখনই আরও সজাগ হয়ে উঠছে৷ প্রো. ক্নোবলখ বলেন, ‘‘পানীয় জলের নেটওয়ার্কে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷ মাটির উপরের স্তর থেকে পানীয় জল নেবার সময় উচ্চ মানের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে৷ ফলে সেখানে মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণু পাবার আশঙ্কা কম৷''
অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল বা অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগের কারণেও প্রতিরোধ দেখা দেয়৷ এমন আচরণে পরিবর্তন না হলে কোনো এক সময় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ হবে না৷
আনেটে শ্মালৎস/এসবি