আমস্টারডামের নতুন আকর্ষণ ‘নেক্সট’ মিউজিয়াম
২৯ অক্টোবর ২০২০আমস্টারডাম শহরে ডিজিটাল শিল্পের নতুন মিউজিয়ামের নাম ‘নেক্সট’৷ দর্শকরা সেখানে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে পারেন৷ প্রথম প্রদর্শনীতে সাতটি সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরা হয়েছে৷ মুখচ্ছবি শনাক্ত করার প্রযুক্তি, ডিজিটাল নজরদারি অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণামের মতো বিষয় তাতে উঠে এসেছে৷
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে কী অবশিষ্ট থাকবে? প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক উপাদানে ভরা এক ইন্টারঅ্যাকটিভ শিল্পের জগত কি আসল প্রকৃতির মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে?
নেদারল্যান্ডসের শিল্পী হেলেন ব্লানকেন-এর ‘হ্যাবিটাট’ নামের ইনস্টলেশন ঠিক সেই প্রশ্নেরই জবাব খোঁজার আহ্বান জানাচ্ছে৷ হেলেন বলেন, ‘‘শুনছি, মানুষ কখনো ৫০ মিনিট ধরে বসে থাকছে৷ এই সৃষ্টিকর্মের মধ্যে ডুবে গিয়ে তারা যেন প্রকৃতিকেই দেখতে পাচ্ছে৷ অর্থাৎ এটা একটা অসাধারণ ফল বলে আমি মনে করি৷’’
আড়াই বছর আগে মেরেল ফান হেল্সডিংখেনের মাথায় এই মিউজিয়াম তৈরির আইডিয়া আসে৷ আমস্টারডাম শহরের উত্তরে তিনি সেই প্রকল্পের জন্য আদর্শ জায়গা খুঁজে পান৷ অতীতে সেটা ছিল এক টেলিভিশন স্টুডিও৷ বিপণন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এবং ‘নিউ মিডিয়া আর্ট' সম্পর্কে উৎসাহ সম্বল করে তিনি অসংখ্য বিনিয়োগকারীর সাহায্যে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন৷ মেরেল বলেন, ‘‘আমার ধারণা, মানুষ ভবিষ্যৎ ও প্রযুক্তি নিয়ে অত্যন্ত মাতামাতি করছে এবং নতুন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটছে৷ আমরা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, শিল্প, বিজ্ঞান, সংগীত – এ সব নিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে একই ছাঁচে গড়ে তুলতে চাই এবং দর্শকদের ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যতের বিষয়গুলির স্বাদ দিতে চাই৷’’
পরিবেশ শিল্পী টাইস বিয়ার্স্টেকারের ‘ইকন্টিনাম’ নামের ইনস্টলেশন মাটির নীচে দুটি গাছের মধ্যে সংলাপ দৃশ্যমান করে তুলছে৷ সেই সিমুলেশনের মাধ্যমে দর্শকদের উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন, কম্পন বা বেড়ে চলা তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ টাইস বলেন, ‘‘শিল্পের ক্ষেত্র হিসেবে ডিজিটাল আর্ট উঠে আসছে৷ এর মাধ্যমে মানুষ যে শুধু বিজ্ঞান ও অন্যান্য তথ্যপ্রবাহ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছে তাই নয়, ডিজিটাল আর্ট এই প্রজন্মের নতুন রং৷’’
প্রদর্শনীতে এমন সাতটি ইনস্টলেশন তুলে ধরা হচ্ছে, যেগুলি স্পেস ভরিয়ে দেয় এবং সব ইন্দ্রিয় সজাগ করে তোলে৷ সেগুলির মাঝে বিশ্রামের জায়গা৷ সুইজারল্যান্ডের শিল্পী বেনইয়ামিন মুৎসিনের অ্যানিমেশন সেই খালি অংশে দর্শকদের স্নায়ু কিছুটা শিথিল করে পরের ইনস্টলেশনের জন্য প্রস্তুত করে তুলছে৷ একজন বললেন, অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ ঠিক যেন কোনো শিল্পকর্মের মধ্যে থাকার অনুভূতি৷ আরেকজনের কাছে বিশাল আকার বিস্ময়কর৷ নেপথ্যের কাহিনির মাধ্যমে তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে৷ এক নারী জানালেন, ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে সত্যি তাঁকে স্পর্শ করে৷ বিশ্বে খুব বেশি এমন জায়গা নেই, যেখানে এভাবে শিল্প দেখার অভিজ্ঞতা সম্ভব৷
ভবিষ্যতে সত্যি কী হবে, নেক্সট মিউজিয়ামের ইনস্টলেশনগুলি তার নিখুঁত পূর্বাভাষ দিতে পারে না৷ তবে আমস্টারডামের নতুন এই মিউজিয়ামে ভবিষ্যতের বিভিন্ন সম্ভাবনার জগতে ডুব মারার সুযোগ রয়েছে৷
পিয়ের প্রেচ/এসবি