আমলাকথন
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের বক্তব্য শুনে সব জেলার ডিসি ও এসপিরা হইচই শুরু করেছিলেন৷ আমলাদের প্রভাব ও আচরণ নিয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷
নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে ডিসি-এসপিদের হইচই
গত ৮ অক্টোবর ঢাকায় সব জেলার ডিসি ও এসপির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন৷ সেখানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান (ছবিতে বামে) নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের ওপর দায় চাপান৷ ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের ‘নখদন্তহীন’ ও তারা ‘মন্ত্রী-এমপিদের ছাড়া চলতে পারেন না’ বলে মন্তব্য করেন৷ তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে একযোগে ডিসি-এসপিরা হইচই শুরু করেন৷
আমলাতন্ত্র নিয়ে পেশাজীবীদের ক্ষোভ
গত জুনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, আইইবির সভাপতি মো. নূরুল হুদা অভিযোগ করেন, পেশাজীবীদের দূরে ঠেলে দিয়ে আমলাদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে৷ আইইবির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘আমলাতন্ত্র আমাদের নিষ্পেষিত করছে, শোষণ করছে৷’’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা আমলাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷’’ (সূত্র: প্রথম আলো)
স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা এখন আমলাদের কাছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত জুনে বলেন, আমলারা স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গলায় রশি বেঁধে ঘোরান৷ ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যানকে সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে দেখা করতে হলেও দিনের পর দিন ঘুরতে হয়৷ স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা এখন আমলাদের কাছে৷ এর ফল কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে৷ (সূত্র: প্রথম আলো)
সাংসদেরা সচিবদের ওপরে: তোফায়েল আহমেদ
গতবছর এপ্রিলে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়৷ জুনে এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে৷ এটা খেয়াল রাখতে হবে৷’’
‘প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন, এমপিরা পাশে বসে থাকেন’
তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর কথা বলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই৷ তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন৷ দেশে কোনো রাজনীতি নেই৷ প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন৷ আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে৷ তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সাথে৷ এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা৷’’
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিসির ডিজিটাল মামলা
২০২০ সালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর করা ডিজিটাল মামলায় সাংবাদিক আকিব হৃদয়কে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল৷ ওই সাংবাদিক ফেসবুক লাইভে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল৷ আকিব বলেছিলেন, ‘‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটকে ‘স্যার’ না বলে ‘ভাই’ বলায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়৷’’ এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন ডিসি৷
আলোচিত ডিসির শাস্তি মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি
২০২০ সালে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে (ছবি) সাজা দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে লঘুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছিল৷ এই শাস্তি দেয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় শাস্তি বাতিল করে তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন রাষ্ট্রপতি৷ এবছর জুনে তিনি যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন৷ পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন বলে রিপোর্ট করেছিলেন আরিফ৷
ইউএনও-র ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’
গত ২১ জুলাই টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু৷ এর একটি অডিও প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ হলে ইউএনওকে ওএসডি করা হয়৷ বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনও’র ভাষা ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট৷
বান্দরবানে ট্রফি ভেঙে আলোচনায় ইউএনও
২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম ফুটবল খেলার ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় এসেছিলেন৷ সেদিন উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই ঘটনা ঘটে৷ ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণের আগে তিনি দুই দলের বিতর্ককে কেন্দ্র করে দুইটি ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলেন৷ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে মেহরুবা ইসলামকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়৷