অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ডুবি
৪ আগস্ট ২০১৪
সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-পথে মাওয়া ঘাটে পদ্মা দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি ডুবে যায়৷ লঞ্চটি শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল৷
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কতৃপক্ষ বিআইডাব্লিউটিএ ডয়চে ভেলেকে জানায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় প্রচণ্ড স্রোতের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
লঞ্চটি মাওয়া আসার পথে মাঝনদীতে ডুবে যায়৷ বিআইডাব্লিউটিএ এবং বিআইডাব্লিউটিসি-র টাগ-বোটের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চলছে৷ উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছে৷ এছাড়া উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে ব়্যাবের হেলিকপ্টার ও ডুবুরি পাঠানো হয়েছে বলে ব়্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন৷
মাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা খালিদ হোসেন জানান, দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি৷ এছাড়া আরো ১১০ জন যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
বাংলাদেশে ঈদের আগে ও পরে এ নিয়ে চারটি বড় ধরণের লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটল৷ গত ১৫ই মে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে এমভি মিরাজ-৪ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়৷ ঐ ঘটনায় নদী থেকে মোট ৫৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এছাড়াও গত ৩০শে জুলাই সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে নৌকাডুবে আট জনের মৃত্যু হয়৷ তার ঠিক দু'দিন আগেই কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীতে নৌ-ভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন৷
২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ৷ এর মধ্যে শুধু এমভি নাসরীন-১ দুর্ঘটনায় ৩৬ শিশুসহ আট শতাধিক প্রাণ হারায়৷ ২০০৩ সালের ৮ই জুলাই রাতে চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় ঘূর্ণিতে পড়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিল ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ যাত্রী নিয়ে চলা ওই লঞ্চ৷ এক হাজার যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল তিন হাজার৷
বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মাস্টার মেরিনার্স-এর নৌ দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তে দেখা যায় যে, শতকরা ৩৪ ভাগ লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷ কারণ হিসেবে এটি শীর্ষে রয়েছে৷ সোসাইটি অফ মাস্টার মেরিনার্সের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনামের মতে লঞ্চ দুর্ঘটনার ১০টি কারণ তাঁরা চিহ্নিত করেছেন৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছাড়াও নির্মাণ ত্রুটি, চালকের গাফিলতি এবং বিরূপ আবহাওয়া লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ৷
সোমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণেই ডুবেছে বলে বিআইডাব্লিউটিএ জনিয়েছে৷ ১০০ যাত্রীর ধারণক্ষমতার লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল ২৫০ জনের বেশি৷