আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে চায় তালেবান
১১ জুন ২০১২২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণের কান্দাহার শহরের ঘটনা৷ স্কুলে যাওয়ার পথে ১৫টি মেয়ের উপর অ্যাসিড ছোঁড়া হয়৷ তালেবান বিদ্রোহ তখন চরমে উঠছে৷ সে যাবৎ এ ধরণের বড় আক্রমণ ঘটেনি বটে, কিন্তু স্কুলে আগুন ধরানো কিংবা বিষ ছড়ানো, অথবা পড়ুয়াদের পানীয় জলে বিষ মেশানোর ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে৷ আরো বড় কথা, তালেবানরা নিজেই যে শুধু এ ধরণের কাজ করছে, এমন নয়৷ তারা স্কুলের পড়ুয়াদেরও বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে এ ধরণের কাজ করতে বাধ্য করছে৷
তাখার প্রদেশে গত বুধবার অন্যান্যদের সঙ্গে দু'জন উঁচু ক্লাসের মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা বলে, তাদের নাকি ক্লাসরুমে বিষ ছড়িয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল৷ বাধ্য করে তাদেরই এক আত্মীয়, যে নাকি তালেবানের সদস্য৷ তাদের বলা হয়, তারা কাজটা না করলে তাদের গুমখুন করা হবে৷
শুধু ছাত্রীরাই নয়, ছাত্ররাও অবস্থা এবং স্কুল বিশেষে আতঙ্কের শিকার৷ স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছাত্ররা গেটে অন্য ছাত্রদের বডি সার্চ করে দেখছে, তাদের কাছে অস্ত্র কিংবা বিষ আছে কিনা৷ স্কুলের বাইরে পুলিশের চেকপয়েন্ট, সেখানে প্রতিদিন কয়েকজন ছাত্র এবং একজন শিক্ষক পাহারায় থাকেন৷ এ সবই রাজধানী কাবুলের দৃশ্য৷ কিন্তু দেশ জুড়ে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে স্কুল ছেড়ে চাকর-বাকরের কাজ নিতে বাধ্য হয়েছে, সেটাও একটা ট্র্যাজেডি৷ যেমন এটা একটা ট্র্যাজেডি যে, দেশ জুড়ে স্কুল বন্ধ হওয়ায় প্রায় দু'লাখ শিশুর পড়াশুনার আর কোনো পথ নেই৷ এবং স্বভাবতই এই শিশুদের অধিকাংশই মেয়ে৷
তালেবান বলছে, এ সবই মিথ্যা প্রচারণা৷ তারা শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়, শুধু ইসলাম-বিরোধী শিক্ষার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল বন্ধ করাটা হল তালেবানের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করার একটা পরোক্ষ পন্থা৷ তালেবান এখন আর সরাসরি সশস্ত্র সংঘাতের পথে যেতে চাইছে না৷ তারা ভীতিপ্রদর্শন ও আতঙ্ক ছড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে চাইছে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী (রয়টার্স)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ