1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিধবারা ‘মরতে প্রস্তুত'

ওয়াসলাট হযরত-নাজিমি/এআই৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

বিধবরা টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে৷ স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর অনেক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন, দারিদ্র্যের কবলে পড়েন৷ সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন করা হয় তাঁদের৷ এঁদেরই একজন মনে করেন, জীবন শেষ হয়ে গেছে তাঁর...

https://p.dw.com/p/17Y8C
Afghan women line up to receive winter supplies at a UNHCR distribution centre for needy refugees at the Women's Garden in Kabul on January 2, 2013. Hundreds of families living in makeshift shelters around the Afghan capital Kabul collected blankets, charcoal and other supplies on January 2 as authorities struggle to avoid last year's deadly winter toll. With temperatures dropping to -10 Celsius (14 Fahrenheit) at night in the city, the 35,000 refugees who live in the snow-covered camps face a battle to survive dire conditions protected only by plastic sheeting. Despite Afghanistan receiving billions of dollars of aid since 2001, more than 100 children died last year during the harshest winter in two decades, and the UN refugee agency has co-ordinated efforts to avoid repeat fatalities. AFP PHOTO/ SHAH Marai (Photo credit should read SHAH MARAI/AFP/Getty Images)
ছবি: AFP/Getty Images

স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শোনার পর গুলগোতাইয়ের মনে হচ্ছিল, পুরো দুনিয়াটাই বুঝি তাঁর মাথার উপরে ভেঙে পড়েছে৷ মাত্র তিন মাসে আগে বিয়ে হয় তাঁর৷ আর এরকম হঠাৎ করেই কিনা চির বিদায় নিল স্বামীটি! বিধবা হিসেবে জীবনযাপন করতে চাননি গুলগোতাই৷ তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, এক বোতল অ্যাসিড পান করে চলে যাবেন দুনিয়া ছেড়ে৷

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশের বাসিন্দা গুলগোতাই৷ পাশের প্রদেশ গজনিতে যেদিন সাইকেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, সেদিন তিনি বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করছিলেন৷ ঐ দিন বোমা বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তি নিহত হয়৷ আহত সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ গুলগোতাইয়ের স্বামীও ছিলেন আহতদের মধ্যে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় খানিকক্ষণ বেঁচে ছিলেন তিনি৷ এরপর সব শেষ৷

অল্প বয়সি এই বিধবার ভাই মোহাম্মদ আজিম জানান, স্বামীর মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পায় গুলগোতাই৷ তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টা প্রসঙ্গে আজিম বলেন, ‘‘সেরাতে গুলগোতাই তার এক বান্ধবীকে নিয়ে বাড়িতে ছিল৷ ঘরের মধ্যে কিছু একটা খুঁজছিল সে৷ এ জন্য বান্ধবীকে একটি প্রদীপ উঁচু করে ধরতে বলে গুলগোতাই৷ এরপর অ্যাসিডের বোতল খুলে তা পান করে সে৷ তবে সময়মত তার বান্ধবী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷''

মেয়েরা আর সহ্য করতে পারছে না

গুলগোতাইয়ের মতো ভাগ্যহত মেয়ের সংখ্যা আফগানিস্তানে কম নয়৷ গত তিন দশকে যুদ্ধের সময় কয়েক হাজার মেয়ে তাঁদের স্বামী বা অন্য পুরুষ আত্মীয়কে হারিয়েছেন৷ যেহেতু তাঁরা পুরুষের উপর নির্ভরশীল, তাই স্বামী বা নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর ফলে মানসিক এবং আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েন তাঁরা৷ এভাবে একসময় কঠিন হতাশায় ডুবে যায়৷

A elderly Afghan woman looks through the window of her house after a clash between Afghanistan forces and Taliban fighters in Kabul on January 21, 2013. NATO troops joined a fight against a Taliban suicide squad that stormed a Kabul police headquarters at dawn on January 21, killing three police officers and unleashing a stand-off that lasted for more than eight hours. The Taliban claimed the attack, which turned into the longest stand-off between the insurgents and security forces in Kabul since a major co-ordinated raid on the capital lasted 18 hours in April last year. AFP PHOTO/ SHAH Marai (Photo credit should read SHAH MARAI/AFP/Getty Images)
আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার আদায়ের লড়াই চলছেইছবি: AFP/Getty Images

গজনি প্রদেশের প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ হামেট জানান, তাঁর হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনজন মেয়ে ভর্তি হন, যাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে মেয়েরা আত্মঘাতী হয়ে ওঠে৷ কারণ তারা এত চাপ সহ্য করতে পারে না৷ সৌভাগ্যক্রমে, গুলগোতাইকে যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল৷ সে এখন আমাদের একটি ওয়ার্ডে ভর্তি আছে৷ তার অবস্থা সংকটজনক নয়৷''

চিকিৎসকের বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গুলগোতাইয়ের ভাগ্য ভালো এবং শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি৷ কিন্তু তাঁর মূল সমস্যা মানসিক৷ মাত্র ২২ বছর বয়স গুলগোতাইয়ের৷ অথচ এই বয়স থেকেই কিনা বিধবা জীবন কাটাতে হবে তাঁকে৷ আফগান সমাজের কথা চিন্তা করলে, নতুন একজন স্বামী তিনি খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না৷ সেদেশের রীতি অনুসারে, বিধবারা সাধারণত মৃত স্বামীর কোনো ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ কিন্তু গুলগোতাইয়ের ভাগ্যে সেরকম কিছু আছে কিনা তাও পরিষ্কার নয়৷

নারী, শান্তি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ওয়াজমা ফ্রগ মনে করেন, যেদেশে মেয়েরা মূলত স্বামীর উপর নির্ভরশীল, সেদেশে বিধবরা স্বাভাবিকভাবেই অনেক দুর্বল হন৷ তিনি বলেন, ‘‘(বিধবা) নারীরা বেঁচে থাকার চাইতে মরে যেতে চান৷ আর এজন্য অনেক কারণও রয়েছে৷ অনেক সময় তাঁরা বিধবা হিসেবে জীবনযাপনেরও অনুমতি পান না৷ উদাহরণস্বরুপ, এক মেয়ের কথা বলা যেতে পারে, যে এখন বিশেষ আশ্রয়ে আছে, সে তার বাবা ও শ্যালকের কাছ থেকে অসদাচরণ এবং যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিল৷ এরকম অনেক কারণে মেয়েরা স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে বেঁচে থাকতে চায় না৷''

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে বর্তমানে ২৫ লক্ষ বিধবা বাস করেন৷ শুধু কাবুলেই এঁদের সংখ্যা সত্তর হাজারের মতো৷ সংখ্যার বিচারে সেদেশের মোট জনশক্তির ১২ শতাংশই বিধবা৷ এদের অধিকাংশই নিরক্ষর এবং তুলনামুলকভাবে কম বয়সি৷

মোটের উপর, আফগান সমাজে একজন বিধবাকে বাজে মহিলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ বেঁচে ফিরে গুলগোতাইকেও এই সমাজের মোকাবিলা করতে হবে৷ কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? পরিবার অবশ্য আশা করছে, গুলগোতাই আর আত্মহত্যার চেষ্টা করবে না৷ কিন্তু সমাজ যে বড় নিষ্ঠুর!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য