আপোশের নাম বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান
ছয়মাসের মধ্যে দুইটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ার পর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে৷
স্বল্প খরচের বিমান
২০১৭ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ ব্র্যান্ডের বিমানটি৷ কম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারা এই বিমানের ইঞ্জিন অন্যান্য বিমানের চেয়ে বেশ বড়৷
দুর্ঘটনায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার-এর একটি ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ বিমান ভেঙে পড়ে৷ ঘটনায় প্রাণ হারান বিমানে থাকা ১৮৯ জন মানুষ৷ এরপর, ২০১৯ সালে মার্চে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি মাঠে বিমানটি ভেঙে পড়লে তাতে প্রাণ হারান বিমানের মোট ১৫৭ জন যাত্রী৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভেঙে পড়ার আগেই বিমানের গায়ে ধরে যায় আগুন৷
উড়াল স্থগিত
কম খরচে উড়তে পারলেও ছয় মাসের মধ্যে বড় দুটি দুর্ঘটনার কারণে বিশ্বের বহু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এই মডেলের বিমান চালু স্থগিত রাখে৷ ফলে চীন, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও সিঙ্গাপুরের একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান রুটে তার প্রভাব পড়ে৷
ত্রুটির কথা জানা ছিল!
বোয়িং বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানতেন বোয়িং-এর কর্মকর্তারা৷ কিন্তু এই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে যে পরিমাণ অর্থলগ্নির প্রয়োজন ছিল, তা না করে, কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন আরেকটি বিমান ‘বোয়িং ৭৮৭’-এর উন্নয়নে মনোনিবেশ করার৷ ফলে, ৭৩৭ ম্যাক্স-কে করতে হয় সমঝোতা৷
কাদের কাছে রয়েছে এই বিমান?
২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশটি ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান উড়াল কার্যক্রম শুরু করে৷ তখন এই মডেলের সবচেয়ে বেশি বিমান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের কাছে৷ এছাড়া আরও ৫,১১০টি বিমান কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছিল প্রায় ৬০টি এয়ারলাইন্স৷ ইউরোপে এই মডেলের বিমানের বড় ক্রেতা নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স, টিইউআই, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও রায়ানএয়ার৷
পাইলটের ক্ষমতা
ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ সালে ভেঙে পড়া বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হবার পর জানা যায় যে, বিমানের চালক শেষ সময়ে বিমানকে স্বভাবিক উচ্চতায় ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি৷ বিভিন্ন পাইলট সংগঠন এই বিমানের নিরাপত্তা ও নিকৃষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার নিন্দা জানিয়েছে৷
কোম্পানি কী বলছে?
ইথিওপিয়ায় দুর্ঘটনার পর একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠায় বোয়িং৷ ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার দুর্ঘটনার পর, কোম্পানি পাইলটদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী দিয়ে জানায় যে, ভুল নির্দেশ দেওয়া হলে বিমানের সফটওয়্যার আপনা থেকে বিমানকে নিম্নগামী করে তুলতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ কিন্তু তারা এটাও বলেছিল যে সাময়িকভাবে কম্পিউটার বন্ধ করে পুনরায় চালু করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব৷
জরিমানা
বোয়িংকে ২০২১ সালের সাত জানুয়ারিতে এসে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর মধ্যে প্রায় ২৪.৪ কোটি ডলার তাদের অপরাধের জন্য, ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইন গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ ১৭৭ কোটি ডলার আর ৫০ কোটি ডলার দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের জন্য ৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বোয়িং কর্মকর্তারা এফএএ এর কাছ থেকে উপকরণ সংক্রান্ত তথ্য লুকিয়ে মুনাফার পথ বেছে নিয়েছিল৷
আবার দুর্ঘটনা
২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় বোয়িং এর ৭৩৭-৫০০ মডেলের একটি বিমান উড্ডয়নের পর নিখোঁজ হয়ে যায়৷ পরে জাভা সমুদ্রে এর ব্ল্যাক বক্সের সংকেত মিলে৷ তবে দুর্ঘটনাকবলিত এই বিমানটি ২৭ বছরের পুরানো এবং বর্তমান প্রজন্মের ৭৩৭ ম্যাক্স-এর ত্রুটিপূর্ণ এমসিএএস সিস্টেম এতে ব্যবহার হয়নি৷ দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি৷