আধুনিক যুগের দাসত্ব
বিশ্বজুড়ে দাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে সেই কবে৷ কিন্তু প্রথা নিষিদ্ধ হলেও এখনো দাসত্ব বিলীন হয়নি৷ বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এখনো দাসত্বের জালে বন্দি৷
অবৈধ শ্রমিক
উন্নত জীবনের আশায় মানবপাচারকারীদের হাতে নিজেকে তুলে দেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বেশিরভাগকে দাসত্বের জীবন বেছে নিতে হচ্ছে৷ কাগজপত্র নেই, ভাষা জানা নেই, নিজের অধিকারে চেয়ে কোথায় অভিযোগ করবে সেটাও জানা নেই৷ ফলে বছরের পর বছর ধরে দাসত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের৷ এক ইউরোপেই কৃষিক্ষেত্রে কত অবৈধ শ্রমিক আছে তার হিসাব কারো জানা নেই৷ নামমাত্র মজুরিতে তাঁরা উদয়-অস্ত পরিশ্রম করছেন৷
অপহরণ, পাচার ও বিক্রি
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে এখনও মানবপাচার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক কারবারের একটি৷ পাচারের শিকার হওয়া পুরুষরা বেশিরভাগ সময় নির্মাণ শ্রমিক বা খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ নারীদের বেশিরভাগের জায়গা হয় পতিতালয়ে, কেউ কেউ হয় গৃহকর্মী৷
শিশুরাও যখন দাসত্বের জালে
নিদারুণ অভাবে অনেক পরিবার তাদের শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়৷ ঘানার লেক ভল্টায় বিক্রি হয়ে যাওয়া এইসব শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যেতে হয়৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে প্রায় এক কোটি শিশু এভাবে দাসের জীবন কাটাচ্ছে৷
বালিকা বধূ
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন মেয়েশিশুর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়৷ এ বয়সে বিয়ে করতে সবসময় বাধ্য করা হয়, বিষয়টা এমনও নয়৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে এসব মেয়েশিশুদের জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ তারা অনেকে শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ সঙ্গে ঘরের কাজ তো করতেই হয়৷
বন্দি জীবন
বিশ্বজুড়ে মেয়েশিশুদের এখনো স্কুল ছেড়ে বাড়ির কাজ করতে হয়৷ কখনো পরিবারে বা কখনো অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে তাদের দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়৷ অনেকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷
ঋণের বোঝা
অতীতের মত দাস কেনা-বেচা এখন আর খুব একটা দেখা না গেলেও এশিয়া, গল্ফ আরব দেশ, আফ্রিকা ও লাতিন অ্যামেরিকার দেশগুলোতে ঋণের বোঝার নিচে চাপা পড়া মানুষরা দাস হতে বাধ্য হন৷ এমকি পরিবারের শিশুটিকেও দাস হিসেবে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়৷ বিশ্বে এমন দাসের সংখ্যা চার কোটির বেশি৷
জন্মসূত্রে দাস
উত্তরপশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া ‘হারাতিন‘ সম্প্রদায়ে জন্মই যেন আজন্ম পাপ৷ পুরুষের পর পুরুষ ধরে এই সম্প্রদায়ের মানুষ দাস৷ যদিও সরকারিভাবে দেশটিতে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ৷ তারপরও সেখানে দাস কেনা-বেচা চলে৷ মৌরিতানিয়ায় ছয় লাখের বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু দাস রয়েছে৷ যারা গৃহকর্ম এবং কৃষিকাজ করেন৷ যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ৷