1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্বের দাবি

১৪ জুলাই ২০১৭

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ছাড়াও নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে বিচার ও আইন বিভাগ৷ কিন্তু ‘বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে’ – এ প্রশ্ন ছাড়িয়ে ‘কিছু ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করা উচিত’– এই দাবিও উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/2gVcb
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

জাতীয় সংসদ, নাকি সুপ্রিম কোর্ট? কার ক্ষমতা বেশি? এ নিয়েই মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি আদালতের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন৷ অধস্তন আদালত বিষয়ে ১১৬ ও ১১৬ক  অনুচ্ছেদ দুটি সংবিধানের মূল ভিত্তির পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে একাধিকবার অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথেও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন প্রধান বিচারপতি৷

অন্যদিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর সংসদ অধিবেশনসহ বিভিন্ন আয়োজনে রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সংসদ সদস্যরা৷ তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে বিচারবিভাগের আর জবাবদিহিতা থাকল না৷

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলছেন, ‘‘আমাদের সাবমিশান ছিল বিফোর দ্য সুপ্রিম কোর্ট যে, এটা (বিচারপতি অপসারণে সংসদের ক্ষমতা) মূল সংবিধানের অংশ, সুতরাং এটা বাতিল করা যাবে না, এটা কোনো অবস্থাতেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসনের পরিপন্থি নয়৷’’ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হবে কিনা, তা নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও জানান আব্দুল মতিন খসরু৷

অবিলম্বে এই দুই বিষয়ে দু'টি আইন করা প্রয়োজন

তবে ‘মূল সংবিধানে ছিল', আব্দুল মতিন খসরুর এমন বক্তব্যের সাথে একমত নন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলছেন, ‘‘৭২-এর সংবিধান কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছিল৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেই কিন্তু এই সংশোধনী হয়েছিল৷ বারবার যে বলছেন ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা, তাহলে এই চতুর্থ সংশোধনীর কী হবে?’’

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি পাশ হওয়া চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু, বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এবং বাকশাল গঠন করা হয়৷

‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই আছে’ – এমন ব্যাখ্যার সাথেও একমত নন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি বলছেন, ‘‘সাংসদরা তদন্ত করবেন সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে, তারপর তাঁরা অভিশংসন করবেন, এই ধরনের প্রক্রিয়া পৃথিবীর কোনো দেশেই নাই৷’’

16th Amendment- Jyotirmoy - MP3-Stereo

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় বিচারপতিদের আর জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু৷ তিনি বলছেন, ‘প্রমাণিত অসদাচরণের কারণে’ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারণের অধিকার সংসদের আছে৷ তবে তিনি মানছেন যে, ‘‘এখন সংবিধানের ১১১ ধারা অনুযায়ী আমরা রায় মানতে বাধ্য৷’’

সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা থাকার বিরোধিতা করলেও, বিচারপতিদের জবাবদিহিতা বিষয়ে একমত ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি বলছেন, ‘‘নিম্ন আদালতের বিভিন্ন বিষয় থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টেরও বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তের সর্বময় ক্ষমতার মালিক করে দেয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে৷ প্রধান বিচারপতিকে বিচার বিভাগের সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া আছে সংবিধানে৷’’ এটিও বিচার বিভাগে একনায়কতন্ত্র তৈরির সুযোগ করে দেয় বলে মনে করছেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷

আদালত পরিচালনার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দাবি তুলছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদারও৷ তিনি মনে করেন, ‘‘নিম্ন আদালতের সুপারভিশন এবং একই সাথে বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে শুধু প্রধান বিচারপতির সম্মতি না নিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে এই কমিটি করা যায়৷’’ সেক্ষেত্রে কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারক, আইনজীবী সমিতির সদস্য বা অন্য কাউকে কমিটিতে রাখা যায় বলেও মনে করেন তিনি৷

16th Amendment- Bodiul - MP3-Stereo

সংবিধানের ৯৫ এবং ৯৬ ধারা অনুযায়ী, বিচারপতি নিয়োগ এবং অপসারণ নিয়ে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সেই আইন৷ ৪৫ বছরেও এ আইন না করতে পারা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে মেনে নিচ্ছেন আব্দুল মতিন খসরু৷ তিনি বলছেন, ‘‘অবিলম্বে এই দুই বিষয়ে দু'টি আইন করা প্রয়োজন৷ সরকার এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছেন৷’’

আদালত পরিচালনায় প্রধান বিচারপতির একক ক্ষমতা হ্রাস করে একটি কমিটির মাধ্যমে তা পরিচালনার কথা ভাবছে সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারত এবং অন্যান্য দেশে একটা কলোসিয়াম আছে৷ চিফ জাস্টিস এবং নেক্সট টু সিনিয়র জাজেস, তাঁরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন৷ এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে৷’’

তবে ঠিক কবে এই উদ্যোগ কার্যকরে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি আব্দুল মতিন খসরু৷