1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি : গুরু পাপে লঘু দণ্ড?

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড' কথাটার যেন বিপরীত চিত্র আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে৷ আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে, তবে ‘অপরাধ' অনুপাতে ‘শাস্তি' যথেষ্ট হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্ন এখন উঠছে৷

https://p.dw.com/p/4afSu
নির্বাচনী প্রচারে কুমিল্লার আ ক ম বাহার উদ্দিনের নির্বাচনী প্রচার
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহারকে নির্বাচন কমিশন এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেছবি: Khokan Chowdhuri

এ পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ২৮২টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৭২টির নিস্পত্তি হয়েছে। ৫৫টি অভিযোগের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। ৬৪ জনের ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের সতর্ক করা এবং কিছু ক্ষেত্রে জরিমানাও করা হচ্ছে৷ দুই জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন পরিচালনায় যারা যুক্ত, তাদের ক্ষেত্রেও বদলি, প্রত্যাহার, নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার মতো ব্যবস্থাও নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার বলেন, "নির্বাচন কমিশন বুধবারই প্রথম দুইজন প্রাথীকে অর্থদণ্ড দিয়েছে। বাকিদের সতর্ক করা হয়েছে।” তার কথা, "নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিলও করতে পারে। আর ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও তা আদালতের এখতিয়ার।”

নির্বাচনি আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০ হাজার টাকা জরিমান। অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করতে পারে।

প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তে যেতে পারি: অশোক কুমার দেবনাথ

কিন্তু নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতার বাতিল ও  কারাদণ্ডের মতো কোনো শাস্তিতে এখনো যায়নি। এই দুই আইনে যা শাস্তি, তা প্রধানত প্রার্থীদের জন্য। প্রার্থীর বাইরে কাউকে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার কমিশনের নেই। অন্যদের অপরাধের জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করতে পারেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনকে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগে বুধবার কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহারকে এক লাখ টাকা এবং বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। অন্যদিকে মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং সংসদ সদস্য ও সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় বৈঠক করা ৩৭ শিক্ষককে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কমিশন। ওই বৈঠকে শাজাহান খানও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে  "গলা নামিয়ে কথা বলার'' আদেশ দেয়ার কারণে শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে শোকজ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। এছাড়া হবিগঞ্জের ডিসিসহ ওই জেলার তিন থানার ওসিকে সোমবার প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফরিদপুরের এসপিকে মঙ্গলবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারে ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু
আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারনে বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ইসিছবি: Ziad Mahmud

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাই'র বিরুদ্ধে কমিশন মামলা করেছে।

নির্বাচনি প্রচার শুরুর আগেআচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ১৬ জন এমপিকে শোকজ করে কমিশন। মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী; গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল; ঢাকা-১৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান; নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।  এছাড়া  নরসিংদী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং গাজীপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন।

এর বাইরে বিভিন্ন জেলায় যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে, তাদের শাস্তির হিসাব আলাদা।

‘হেডম দেখানোর' কালচার চলছে: ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, "এবার নির্বাচন কমিশর বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। শম্ভু ও বাহারের মতো প্রভাবশালী প্রার্থীকে জরিমানা করেছে। তারা চেষ্টা করছে আইন প্রয়োগ করার। কিন্তু আমাদের এখানের যে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি, সেই কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না। ‘হেডম দেখানোর' কালচার চলছে। আর প্রার্থীরা জানে, বড় জোর সতর্ক করা, ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এগুলো তারা পাত্তা দেয় না।”

তার মতে, "নির্বাচন কমিশনের আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। তারা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারেন,  কারাদণ্ড দিতে পারেন। সেরকম কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের এই প্রবণতা কমতো।”

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, "আসলে নির্বাচর কমিশন যা করছে, তা লোক দেখানো। তারা কঠোর কোনো শাস্তির মধ্যে যাচ্ছে না। যে হারে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তাতে কঠোর শাস্তি দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আর থাকবে না। আর সবাই জানে, এটা পাতানো নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন জানে, প্রার্থীরাও জানে। সবাই জানে নৌকা আর স্বতন্ত্র সবাই আওয়ামী লীগ। তারাই ক্ষমতায় আছে, ক্ষমতায় থাকবে। তাই প্রার্থীরাও কাউকে পরোয়া করছে না। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, " আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, তারপরও কালচারাল কারণে এরকম হচ্ছে। তারা মনে করছে, এসব করে পার পাওয়া যায়। আগে অনেক ঘটনায় ব্যবস্থা না নেয়ায় একটা ইমিউনিটি কালচার তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, এবারও কিছু হবে না। কিন্তু আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

তিনি বলেন, "আচরণবিধি আইন ছাড়াও আরপিওর ৯১(ই) ধারায় আমরা প্রার্থীতা বাতিল করতে পারি। আরো কিছু সিরিয়াস অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে, আমরা সেইসব অভিযোগের প্রমাণ পেলে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তে যেতে পারি।”

আর মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "দুইজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও এর ফল পেতে অনেক সময় লাগে। দেখা গেছে, আদালতের রায় হতে চার বছর লেগে গেল। ততদিনে ওই প্রার্থী এমপি হয়ে চার বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। এরপর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আরো এক বছর কাটিয়ে দেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান