আকাশে পালতোলা নৌকো ওড়াচ্ছেন উদ্ভাবক
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪সম্প্রতি ফ্রান্সের দক্ষিণে কোৎ দাজুর উপকূলে নিজের তৈরি বিমানে নীরবে উড়ে বেড়িয়েছেন স্টেফান রুসঁ৷ তিনি একাধারে অ্যাডভেঞ্চারার ও উদ্ভাবক৷ এই প্রথম নিজের তৈরি বিমান আকাশে উড়িয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা অবিশ্বাস্য৷ আমরা অনেক কিছু পরীক্ষা করতে পারি৷ যেমন নৌকার উপর সেপেলিন ফোলানো, আরও অনেক কিছু৷ বেশ স্ট্রেস-এর ব্যাপার৷''
একদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ নিস শহরের কাছে ভিলফ্রঁশ-সুয়র-ম্যার-এর বন্দরে যাত্রা শুরু হয়েছিলো৷ এক হাইড্রোফয়েল বোট থেকে শুরু হলো ‘এয়ারোসেল' নামের অভিযান, যার অর্থ আকাশের পালতোলা নৌকা৷ নৌকোয় রাখা হয়েছিলো সেপেলিন উড়োজাহাজের জন্য ১৯টি হিলিয়াম সিলিন্ডার৷ ছিলেন রুসঁ-এর সহকর্মী ডেনিস ডেক্ল্যার্ক৷ অভিযানের উদ্দেশ্য, নিজেদের তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশপথে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে কর্সিকা দ্বীপে পৌঁছানো৷
এই উদ্বোধনী যাত্রার সময় ধরা হয়েছিলো প্রায় ৫ ঘণ্টা৷ কিন্তু প্রস্তুতি পর্বেই সমস্যা দেখা যাচ্ছিল৷ স্টেফান রুসঁ বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের পেছনে প্রায় ১০ বছরের পরিশ্রম রয়েছে৷ আইডিয়াটা হলো, আমরা সেপেলিন-টিকে পালতোলা নৌকার মতো এগিয়ে নিয়ে যাবো৷ কিন্তু তাতে সমস্যা হলো, সেপেলিন ফোলানোর জন্য প্ল্যাটফর্ম, বন্দর বা বিমানবন্দরের মতো শান্ত পরিবেশ প্রয়োজন৷ কিন্তু আমাকে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ ফলে শেষ পর্যন্ত আমাকে সমুদ্রের বুকে প্রকল্পটি চালাতে হয়েছে৷''
সমুদ্রের একটি খাঁড়িতে বাতাসের ধাক্কা বাঁচিয়ে পাইলট ১৮ মিটার লম্বা সেপেলিন-এ হিলিয়াম ভরছেন৷ এই বেলুন খুবই নাজুক, এই অবস্থায় কোনো ধাক্কা লাগালে চলবে না৷ সেটি ফেটে গেলে অভিযানের দফারফা৷ কিন্তু স্টেফান ছাড়ার পাত্র নয় – তিনি এই প্রচেষ্টা চালিয়ে ইতিহাস গড়তে চান৷ স্টেফান রুসঁ বলেন, ‘‘এটি গত শতাব্দীর শুরুর দিকের দারুণ এক আইডিয়া৷ ১৯৯২ সালে প্রথম প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন জেরার ফেল্ডজার ও নিকোলা উলো৷''
স্টেফান রেকর্ডের পিছনে দৌড়াতে অভ্যস্ত৷ ২০০৮ সালে তিনি নিজেরই তৈরি প্যাডেল-চালিত সেপেলিন তৈরি করে ইংলিশ চ্যানেল পেরোনোর চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু সে বার তীরে এসে তরি ডুবেছিল৷ বছর তিনেক পর তিনি ‘স্কুবস্টার' নামের এক সাবমেরিন ডিজাইন করেন, যা একই ভাবে জলের নীচে চলতে পারবে৷ এর জন্য তিনি মার্কিন মেরিন-এর উদ্ভাবনী পুরস্কার পেয়েছেন৷
আকাশের পালতোলা নৌকা সেই প্রথম দুটি প্রচেষ্টারই বিবর্তনের ফল৷ স্টেফান বায়ুশক্তির উপর জোর দিয়েছেন৷ সেপেলিন-এর দিক পরিবর্তনের জন্য তৈরি করেছেন এক বৈঠা৷ সেটি জলে ডুবে থাকছে এবং দড়ির সাহায্যে বেলুনের সঙ্গে যুক্ত৷ স্টেফান রুসঁ বলেন, ‘‘এভাবে বাতাস বেলুনের সংস্পর্শে আসছে৷ আমি এই দড়ি টানলে সেপেলিন বাতাসের ধাক্কা খাচ্ছে৷ কিন্তু দড়িটি অন্যভাবে টানলে সেপেলিন অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে৷''
ওড়ার ঠিক আগে শেষবারের মতো পরীক্ষা হয়৷ স্টেফান রুসঁ বলেন, ‘‘আমি সমুদ্রের উপর থাকলে এবং আমাকে ফিরিয়ে আনতে হলে তোমরা জলে বৈঠাটি অথবা দড়িটি ধরার চেষ্টা কোরো৷''
তারপর আকাশে ওড়ার পালা৷ বিনা সমস্যায় যাত্রা শুরু হলো৷ দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পে প্রায় ২০ লক্ষ ইউরো বিনিয়োগ করা হয়েছে৷ ১৫ মিটার উচ্চতায় পাইলট প্রথম বার কনট্রোল পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ স্টেফান রুসঁ বলেন, ‘‘আমি প্রায় ৯০ শতাংশ সন্তুষ্ট৷ কিন্তু পূর্বাভাষ সত্ত্বেও বাতাস বড় কম৷ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইলে আমাদের ভালো হতো৷''
বাতাসের অভাবে স্টেফান-কে ঘণ্টাখানেক পরেই যাত্রা শেষ করতে হয়৷ তা সত্ত্বেও ‘এয়ারোসেল' যানের প্রথম যাত্রাকে আংশিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন তিনি৷ প্রযুক্তি কাজ করেছে৷ আগামী বছর তিনি আবার চেষ্টা করবেন৷ যথেষ্ট বাতাস বইলে তিনি কর্সিকা পর্যন্ত উড়তে চান৷