আকাশ সংস্কৃতির কারণে গ্রাম্য মেলায় প্রভাব পড়ছে
১৭ অক্টোবর ২০১৭ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইফতিখার বলেন, আকাশ সংস্কৃতির কারণে আগে মেলাগুলোতে ঐতিহ্যের যে বহিঃপ্রকাশ ছিল, সেটাও কমে যাচ্ছে৷
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে এখন গ্রাম্য মেলার সংখ্যা কত?
মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার: ২০১৫ সালে বিসিক একটা জরিপ করেছিল৷ সেই হিসেবে ১,৭৯৫ এর কিছু বেশি গ্রাম্য মেলার পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে৷
গ্রাম্য মেলার সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে না বেড়েছে?
আসলে কমেছে না বেড়েছে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না৷ তবে এটা বলা যায়, মেলাগুলোতে অংশগ্রহণ কমেছে বা এর মাত্রা কমেছে৷ জৌলুসও কমেছে৷ তবে সংখ্যা কমেছে এমন কোনো তথ্য আমরা পাচ্ছি না৷
মেলা যদি বেড়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয় নতুন মেলা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে?
নতুন নতুন মেলা যোগ হচ্ছে এটাও বলা যাচ্ছে না৷ তবে বিসিক কিছু মেলা যোগ করেছে মনীষীদের নামে৷ যেমন ধরেন সত্যেন মেলা, বা মধুসূদন দত্তের নামে মধু মেলা বা সুলতান মেলা এমনকি জামদানি মেলাও আমরা করছি৷ এগুলো বেড়েছে৷ কিন্তু ঐতিহ্যে লালিত মেলা বেড়েছে কিনা সেটা বলা যাবে না৷
সাধারণত কোন সময়ে মেলা বেশি হয়?
প্রবাদ আছে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন৷ কোন মাসে বেশি হয় সেটা এভাবে বলা যাবে না৷ তবে শীতের সময় একটু বেশি মেলা হয়৷ আবার চৈত্র বা বৈশাখ মাসেও মেলাটা বাড়ে৷ জৈষ্ঠ্য, শ্রাবণ বা ভাদ্র মাসে তেমন কোন মেলা হয় না৷ এছাড়া অন্য সব সময়ই মেলা হচ্ছে৷
আগে পূজা-পার্বনে গ্রাম্য মেলা দেখা যেত৷ এখন সব জেলায় কি তেমন চিত্র আছে?
আমাদের যে জরিপ সেটাতে দেখা যাচ্ছে আছে৷ পূজা-পার্বন ঘিরেই কিন্তু বাঙালিদের মেলা হয়৷ আমরা বলতে পারি, এর হয়ত ব্যাপকতা কমেছে, অংশগ্রহণ কমেছে, তবে আমরা বলতে পারি না যে, সেই চিত্রটি নেই৷ কারণ এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই৷
গ্রাম্য মেলা নিয়ে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি, থাকলে সেগুলো কী ধরনের?
আসলে বিসিকের তেমন কোনো মেলা নেই৷ তবে আমরা মনীষীদের নামে কিছু মেলা করছি৷ এছাড়া আমাদের যে প্রোডাক্ট, যেমন ধরেন হস্তশিল্প সেগুলো নিয়ে আমরা কিছু মেলা করি৷ তার মধ্যে জামদানি মেলার কথা আমি উল্লেখ করতে পারি৷ আর বৈশাখী মেলাটা শহরে পরিচিত করেছে কিন্তু বিসিক৷ আগে গ্রামে হতো, ২-৩শ' জায়গায় হতো৷ কিন্তু শহরে হতো না৷ আমরা সেটাকে শহরে এনেছি৷ বিসিক কিন্তু কোন মেলায় পৃষ্ঠপোষকতা করে না৷ আমরা আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেলা করে থাকি৷ তাও কিন্তু আমরা এটা সব সময় করতে পারি না৷
বিসিকের উদ্যোগে কতগুলো মেলা হয়? এর কি কোনো পরিসংখ্যান আছে?
আমরা যেগুলো করি তা খুবই নগন্য৷ আমরা মনীষীদের নামে ৫-৬টি মেলা করি৷ আর পাঁচটি ঋতুতে কিছু মেলা করি৷ এই মেলাগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ, যা আমরা সব সময় টেককেয়ার করতে পারি না৷ অন্য কোন বিভাগ বা দফতর হয়ত এটা দেখে৷
বর্তমানে গ্রাম্য মেলাতে কোন বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পায়?
আমি বলব যে, এই মেলাগুলো ছিল আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি মিলিয়ে একটা বিশেষ মুহূর্ত, যেখানে আমাদের অনেক লোকের মিলন হতো এবং আমরা অনেক পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হতাম৷ সেটা কিন্তু এখনো আছে৷ এখন দেখা যাচ্ছে যে, এখানে বাণিজ্য প্রাধান্য পাচ্ছে৷ আর আকাশ সংস্কৃতির কারণে মেলাগুলোতে আমাদের ঐতিহ্যের যে বহিঃপ্রকাশ ছিল সেটা কমে যাচ্ছে৷ উদাহরণ দিয়ে বলি, আগে যে পুঁথি পাঠের আসর হতো সেটা এখন আর দেখি না৷ বাউল গানের আসর বসত এখন নির্দিষ্ট মেলা ছাড়া এই আসর দেখা যায় না৷ এখন অনেক মেলায় আমরা ভিডিও গেম দেখতে পাই৷ আমরা দেখছি, আমাদের সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ কিছুটা সরে গেছে৷ সেখানে আকাশ সংস্কৃতি অনেকটাই দখল করেছে৷
শহরে এবং গ্রাম্য মেলার মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
শহরের মেলাগুলো অনেক গোছালো হয়৷ এখানে পানি, টয়লেটসহ একটা গোছানো অবস্থা থাকে৷ কিন্তু গ্রামের মেলাগুলো প্রকৃতি আশ্রিত৷ একটা মাঠের মধ্যে ঘেরাও করে সেখানে মেলা হচ্ছে৷ শহরের মেলায় একটা জৌলুস আছে৷ কিন্তু গ্রামের মেলায় আবেগ আছে বা আন্তরিক পরিবেশ আছে৷ উভয় মেলাতেই একই ধরনের পণ্য পাওয়া যায়৷
দুই মেলার মধ্যে কি কোনো মিল আছে?
দুই মেলাতেই যারা আসেন তারা সবাই বাঙালি৷ পণ্য কিন্তু প্রায় একই ধরনের৷ তবে শহরের মেলায় কিছু সিলেকটিভ পণ্য আছে৷ যার কোয়ালিটিও একটু ভালো৷ কারণ শহরের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেশি৷ আর তরুণ প্রজন্মের কথা যদি বলি, দুই মেলাতেই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ আছে৷
গ্রাম্য মেলা যদি কমে থাকে তাহলে সংস্কৃতিতে একটা প্রভাব পড়ার কথা, সেটা কেমন?
মেলার সংখ্যা কমছে কি কমছে না সেটা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও আমরা বলতে পারি চোখে আমাদের কম পড়ে৷ আমাদের মেলাগুলোতে জনসমাগম কমে যাচ্ছে৷ এর ফলে আমাদের যোগাযোগের পরিধিটা কমে যাচ্ছে৷ আমাদের যে নতুন পণ্য তৈরি হচ্ছে সেটা আমরা সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি না৷ ফলে এর একটা অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়ত আছে৷ এছাড়া আবহমান বাংলাকে অনুধাবনও করা যায় না৷ বন্ধুত্ব ও পরিচিতি সংকুচিত হচ্ছে৷ এভাবেই আর্থ-সমাজিক একটা প্রভাব পড়ে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷