‘আওয়ামী লীগের প্রেস্টিজ, বিএনপির ইস্যু’
২ জুলাই ২০১৩বলা বাহুল্য, সদ্য শেষ হওয়া চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু' হিসেবে নিয়েছে৷ এর প্রধান কারণ, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ তাই ৬ জুলাইয়ের নির্বাচনেও হেরে গেলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে৷ তাই যত কেন্দ্রীয় নেতা আর সংসদ সদস্য সবাইকেই নামিয়ে দেয়া হয়েছে এই নির্বাচনে৷ অন্তত ১০০ জন সংসদ সদস্য প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷
এদিকে, চারটি সিটি কর্পোরেশনে জিতে দারুণ উত্ফুল্ল বিএনপি৷ গাজীপুরেও তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেদের প্রার্থী জেতাতে৷ এই নির্বাচনে তারা পাশে পেয়েছে জামায়াত, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), হেফাজতে ইসলামসহ সরকার বিরোধী সব দল ও মতের মানুষকে৷ তবে কোনো কারণে তারা হেরে গেলে তৈরি হবে নতুন ইস্যু, যা সামনের সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন আরো চাঙ্গা করবে৷ তাই এই নির্বাচনে বিএনপি জিতলেও লাভ, হারলেও লাভ৷
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাকীব উদ্দিন আহমদ সোমবার বলেছেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে৷ এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি৷ নির্বাচনের পর ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয় মিছিল না করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি প্রার্থী, ভোটার ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷ সোমবার দুপুরে গাজীপুরে এক মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷ বলেন, ‘‘নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে এ পর্যন্ত সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখেছেন৷ এ জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই৷''
এছাড়া, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি৷ কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তাত্ক্ষণিক প্রার্থীদের রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি৷ অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন৷''
ওদিকে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির ভাঙন এখন সময়ের ব্যাপার৷ ইতিমধ্যে এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিয়েছে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীকে৷ জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে মাঠেও নেমেছেন৷ তারপরও জাতীয় পার্টির সমর্থন আদায়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ৷ সোমবার সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে দেখা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান৷
জানা যায়, এরশাদের গুলশানের ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে'-র বাসায় যান আজমত উল্লা৷ এ সময় তিনি প্রায় ২০ মিনিট সেখানে অবস্থান করেন৷ বৈঠকের ব্যাপারে এরশাদের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজমত উল্লা সমর্থন প্রত্যাশায় স্যারের সাথে দেখা করেছেন৷ স্যার বলেছেন, এটা স্থানীয় নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে আমি সমর্থন দিলে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে৷ তাই আমি আপনাকে সমর্থন দিতে পারছি না৷'' তবে আজমত উল্লাকে এরশাদ দোয়া করেছেন বলেও জানান তিনি৷ এ বিষয়ে আজমত উল্লা বলেন, ‘‘এরশাদ সাহেবের সাথে দেখা করে দোয়া নিতে এসেছিলাম৷ তিনি দোয়া করে দিয়েছেন৷ অবশ্য সমর্থনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি৷''
এই নির্বাচনে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়া আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছে নিজেদের প্রার্থী জেতাতে৷ শেষ পর্যন্ত নারায়নগঞ্জের আলোচিত নির্বাচনে জয়ী হওয়া মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভীকে মাঠে নামিয়েছে তারা৷ ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লার পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন তিনি ইতিমধ্যেই৷ সোমবার বিকেলে তিনি গাজীপুরে পৌঁছে আজমতের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন৷ আগামী তিন দিন আইভী গাজীপুরে আজমতের পক্ষে গণসংযোগ করবেন বলে ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন৷ সেলিনা হায়াত্ আইভীর জনপ্রিয়তাকে গাজীপুরে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ৷ এজন্য আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের অনুরোধে তিনি ১৪ দলের পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন৷ প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াত্ আইভী৷
অন্যদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৯২ জন দলীয় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তিনি এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন৷ নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়ন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আবারও আহ্বান জানান তিনি৷ মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এর আগে চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করলেও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করেছে৷ চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হলেও, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না বলে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ফখরুল৷