1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইসিইউ-তে বরিস জনসন

৭ এপ্রিল ২০২০

করোনায় আক্রান্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হলো আইসিইউ-তে। অ্যামেরিকায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ১০ হাজার।

https://p.dw.com/p/3aZBw
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Wire/M. Dunham

রোববারই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। যুক্তরাজ্যের প্রশাসন জানিয়েছিল, রুটিন চেক আপের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার স্পষ্ট হল, চেপ আপ নয়, অসুস্থতার কারণেই হাসপাতালে ভর্তি প্রধানমন্ত্রী। এ দিন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। আপাতত  সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত নেবেন বিদেশ সচিব ডমিনিক রাব। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''সন্ধ্যার পর থেকে জনসনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তাই তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।''

দিন দশেক আগে করোনায় আক্রান্ত হন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। অফিসও চালাচ্ছিলেন ঘরে বসেই। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ভিডিও মেসেজ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দিয়েছেন তিনি। নিজের শরীরের খবর দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক ভাবে যুক্তরাজ্য কী ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, সে বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রোববার বিকেল থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তারপরেই দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জনসনকে শুভ কামনা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী। ম্যার্কেল বলেছেন, ''ইইউ-র সামনে সব চেয়ে বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে।'' যুক্তরাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি লোক। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৭৩ জনের। সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১৩৫ জন।

এ দিকে অ্যামেরিকার পরিস্থিতি গত ২৪ ঘণ্টায় আরও উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ৩৬ হাজার। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৮৭৬ জনের। মৃতের সংখ্যার নিরিখে ইটালি এবং স্পেনের পিছনেই অ্যামেরিকা। সোমবার রাত পর্যন্ত ইটালিতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৫২৩ জনের। আর স্পেনে মারা গিয়েছেন ১৩ হাজার ৩৪১ জন। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপে করোনা পরিস্থিতি খানিকটা আয়ত্তের মধ্যে এসেছে। নতুন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক দিন মৃতের সংখ্যা বাড়লেও পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু অ্যামেরিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় লাফিয়ে বাড়ছে। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঘটবে। সপ্তাহখানেক আগে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, আগামী দুই সপ্তাহে এক থেকে দুই লাখ পর্যন্ত লোকের মৃত্যু হতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের এক রিপোর্ট বলছে, মৃতের সংখ্যা দুই লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেখানে বলা হয়েছে, সকলে বাড়িতে বসে থাকলেও মৃত্যু এবং সংক্রমণ এড়ানো যাবে না।

অ্যামেরিকায় এই মুহূর্তে সব চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি নিউ ইয়র্কে। শুধু সেখানেই এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ১০০ জনের। প্রতিটি হাসপাতাল উপচে পড়ছে। চিকিৎসা কর্মী এবং চিকিৎসকদের ১৮ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত। তারই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বার বার জানাচ্ছেন, রোগী দেখার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পোশাক, জিনিসপত্র, টেস্ট কিট সবই অপ্রতুল। বার বার বলা সত্ত্বেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেরই অভিযোগ, অ্যামেরিকায় যে এমন পরিস্থিতি আসতে চলেছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন আগেই তা জানতেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেননি তিনি। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর উন্নতিতেও মনোযোগ দেননি। এখন তারই খেসারত দিতে হচ্ছে। বস্তুত, কেন আরও অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি হলো না, তা নিয়েও অভিযোগ করছে কোনও কোনও মহল।

অ্যামেরিকায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং মিশিগান। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলায় সমস্যা যে হচ্ছে তা স্বীকার করে নিচ্ছে প্রশাসনও। নিউ ইয়র্কের মেয়র জানিয়েছেন, এই সময়ে দেশের প্রয়োজন কয়েকজন হিরো বা নায়কের। যাঁরা অকুতোভয়ে রোগীর সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন। যদিও প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না দিলে হিরো মিলবে কী করে? বস্তুত, নিউ ইয়র্কের পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে মৃতদেহ রাখার জন্য অস্থায়ী মর্গ তৈরি করতে হয়েছে। প্রশাসন ভাবছে, একটি পার্ক চিহ্নিত করে সেখানে আপাতত কবরেরও ব্যবস্থা করা হবে। কারণ, এক সঙ্গে যে পরিমাণ মৃতদেহ আসছে, তা কবর দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

চীনে নতুন করে করোনা ছড়ালেও তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলেই জানিয়েছে সেখানকার সরকারি সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, সোমবার করোনায় একজনেরও মৃত্যু হয়নি। গত কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রথম চীনে এমন ঘটনা ঘটল। যদিও গত কয়েক দিনে চীনে ফের করোনার সংক্রমণ সামান্য বেড়েছে। চীন সরকারের অবশ্য দাবি, বিদেশ থেকেই এই রোগ নিয়ে ফিরেছেন আক্রান্তরা। দেশের ভিতরে নতুন করে সংক্রমণ ঘটেনি।

জাপানও করোনা মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। করোনা সংক্রমণ এখনও সে ভাবে প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার জাতি সঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বসার কথা। এই প্রথম করোনা নিয়ে বৈঠকে বসবে জাতি সঙ্ঘ।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)