আইপিএল টিমে আমায় ‘কালু' বলা হতোঃ স্যামি
১০ জুন ২০২০ক্রিকেট দুনিয়ায় বর্ণবিদ্বেষের ঘটনা বা বিতর্ক নতুন নয়৷ অতীতে প্রচুর হয়েছে৷ বর্ণবাদী কথা বলার অভিযোগ উঠেছে বহু ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে৷ সেই তালিকায় আরেকটি বিতর্ক যুক্ত হলো৷ এবার অভিযোগ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি৷ ২০১৪-র আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ টিমে ছিলেন স্যামি৷ ইনস্টাগ্রামে তার অভিযোগ, তখন টিমের সদস্যরা তাঁকে 'কালু' বলতেন৷ আর 'কালু' বললেই সেখানে হাসির হুল্লোড় উঠত৷ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার থিসারা পেরেরাকেও একই কথা শুনতে হয়েছে৷
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বিশ্ব জুড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে৷ সেই পরিস্থিতিতে স্যামির অভিযোগ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
স্যামি জানিয়েছেন, তিনি তখন 'কালু' কথাটার মানে জানতেন না৷ ভাবতেন, কোনো মজার কথা বোধহয়৷ কিন্তু সম্প্রতি ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হাসান মিনহাজের শো থেকে কথাটার মানে জানতে পেরেছেন৷ সোমবার স্যামি সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, সাবেক টিমমেটদের কাছে তিনি জানতে চাইবেন, তারা কি মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করতেন? তিনি ক্রিকেটারদের নাম বলার আগে তাঁরা আগে ক্ষমা চেয়ে নিন৷
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে স্যামির সঙ্গে খেলেছেন ইরফান পাঠান৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কখনও দেখিনি ড্যারেনকে কেউ 'কালু' বলে ডাকছে৷ ও তো হোটেলে আমার ঘরে প্রায়ই আসত৷ আমরা ডিনার করতাম৷ বিরিয়ানি খেতাম৷ আমার সামনে অন্তত কেউ ওকে 'কালু' বলে ডাকেনি৷''
তবে পাঠান স্বীকার করেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে বর্ণবাদী মন্তব্য করা হয়৷ বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে৷ ভারতে উত্তর পূর্বের লোকেরাও বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হন৷
স্যামি যে সময়ের কথা বলছেন, তখন বিসিসিআই-এর সচিব ছিলেন সঞ্জয় প্যাটেল৷ তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘তখন স্যামি বা সানরাইজার্স এই ধরনের কোনও অভিযোগ করেনি৷ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যেত৷''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবশ্য জানাচ্ছে, ২০১৪-তেই সানরাইজার্সের আরেক ক্রিকেটার ইশান্ত শর্মা সামাজিক মাধ্যমে একটা ছবি পোস্ট করেন৷ সেখানে চারজনের ছবির ক্যাপশন লেখা হয়েছিল, ‘‘আমি, ভুবি, কালু ও গান(স্টেইন) সানরাইজার্স৷'' ছবিতে ইশান্ত ছাড়া ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার, ডেল স্টেইন ও ড্যারেন স্যামি৷
এই উপমহাদেশে এর আগেও কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটারদের ‘কালু' বলে ডাকা হয়েছে৷ ২০১৯ এ পাকিস্তানের ক্রিকেট ক্যাপ্টেন সরফরাজ আহমেদ ডারবানে একদিনের ম্যাচ চলার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার ফেহ্লুকোয়ায়োকে ‘কালু' বলে তার সঙ্গে বেশ কিছু আপত্তিকর কথা বলেছিলেন৷ পরে তিনি অবশ্য তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন৷
ক্রিকেটে বর্ণবাদনিয়ে অন্যতম বড় বিতর্ক হলো মাঙ্কিগেট৷ ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস অভিযোগ করেছিলেন, ভারতীয় অফ স্পিনার হরভজন সিং তাঁকে ‘মাঙ্কি' বা ‘বাঁদর' বলেছেন৷ সেটাও ছিল বর্ণবাদী গালাগালি৷ ম্যাচ রেফারি হরভজনকে শাস্তি দিয়েছিলেন৷ পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়৷
সে সময় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ম্যাচ কভার করেছিলেন সাংবাদিক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘শচিন টেন্ডুলকারের সাক্ষ্যের পর বিতর্ক মেটে৷ অ্যাডিলেডে বিচারক তো শচিনকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আপনাকে পেয়ে আমরা সম্মানিত৷ এরপর আমাদের আদালত থেকে চলে যেতে বলা হয়৷ পরে শুনেছি, শচিন বলেছিলেন, হরভজন মাঙ্কি বলেননি৷ উত্তর ভারতীয় একটি স্ল্যাং বলেছিলেন, যা শুনতে ভুল হয়েছিল সাইমন্ডসের৷''
জিএইচ/জেডএ (এএনআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)