আইনস্টাইনের ‘থিওরি অব স্পেশাল রিলেটিভিটি’ ভুল?
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১নিউট্রিনো আলোর চেয়ে দ্রুতগতির!
ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরির নাম সার্ন৷ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে অবস্থিত এটি৷ সেখানে কাজ করা পদার্থবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন৷ তাতে তারা বলেন যে, নিউট্রিনো নামের একটি কণা নাকি আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে চলতে পারে৷ তাদের এই তথ্যই আইনস্টাইনের তত্ত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে৷ কেননা আইনস্টাইন বলেছেন আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই৷ আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে তিনি এই কথা বলেন৷ যেটা পরবর্তীতে অনেক পরীক্ষার সন্মুখীন হয়৷ কিন্তু প্রতিবারই আইনস্টাইনের কথা সত্য প্রমাণিত হয়৷ আর তাঁর এই দাবিই হলো বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভিত এবং এটার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক তত্ত্ব৷
সার্নের বিজ্ঞানীরা বলছেন তারা তিন বছর ধরে গবেষণা করেছেন৷ এসময় তারা জেনেভার সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা ইটালির রোমের কাছে মাটির নীচের গ্রান সাসো ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠিয়েছেন৷ এসময় তারা দেখতে পান যে, আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউট্রিনো৷ সংখ্যার হিসেবে, নিউট্রিনো আলোর চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড বেশি দ্রুতগতির৷ অর্থাৎ এক সেকেন্ডকে যদি একশো কোটি ভাগ করা হয়, তাহলে তার ৬০ ভাগ যতটুকু সময় হবে ঠিক ততটুকু সময় আগে নিউট্রিনো রোমের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পৌঁছে৷
বিজ্ঞানীরা যখন শুরুতে নিউট্রিনোর এই ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হন তখন তারা বিশ্বাস করতে পারেন নি৷ তাই তারা সম্ভাব্য সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করে বারবার একই পরীক্ষা করতে থাকেন এবং একই ফলাফল পান৷
কিন্তু যেহেতু প্রাপ্ত এই তথ্য পদার্থবিজ্ঞানীদের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাই বিষয়টা নিয়ে যেন বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করেন সেজন্য সার্নের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক সেমিনারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন৷ আর বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যেন বিজ্ঞানীরা সহজেই গবেষণাটি দেখতে পারেন সেজন্য একটি ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদনটি রাখা হয়েছে৷
গবেষণা যাচাই
সেমিনারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে সার্নের বিজ্ঞানী দারিও, তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি যাচাই বাছাই করে দেখতে মার্কিন ও জাপানি বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, অ্যামেরিকার ‘ফার্মিল্যাব' ও জাপানের ‘টিটুকে' নামের দুটি গবেষণা কেন্দ্র একই বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ ফার্মিল্যাবের এক বিজ্ঞানী অধ্যাপক জেনি থোমাস বলছেন সার্নের বিজ্ঞানীদের তথ্য যদি আসলেই সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানে তার প্রভাব হবে অনেক বড়৷
অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মত
এদিকে, বর্তমানে বেঁচে থাকা পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে পরিচিত সেই স্টিফেন হকিং বলছেন সার্নের গবেষণার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি৷ তিনি বলেন এর জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন৷
কসমোলজিস্ট ও অ্যাস্ট্রোফিজিসিষ্ট মার্টিন রিস বলেছেন, অতি আশ্চর্যের কোনো দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সেরকমই কোনো প্রমাণ৷ সার্নের বিজ্ঞানীরা যেটা বলছেন সেটা সেরকমই একটা অতি আশ্চর্যের দাবি বলে মন্তব্য করেন ঐ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী৷
এদিকে আরেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা-পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশাও বলছেন, সার্নের গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয় তার মানে হলো আজকের তথ্য পাঠিয়ে দেয়া যাবে অতীতে৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন আমরা কল্পবিজ্ঞানে হরহামেশাই যে ‘টাইম ট্রাভেল'এর কথা পড়ি সেটা সত্যি হবে৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তার মানে এই নয় আমরা খুব তাড়াতাড়িই টাইম মেশিন বানাতে যাচ্ছি৷
নিউট্রিনো কী?
সার্নের এক বিজ্ঞানী বলছেন, নিউট্রিনো সাধারণত পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়৷ ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া পর থেকে এখন পর্যন্ত এটা শুধু বিজ্ঞানীদের অবাকই করে যাচ্ছে৷ এ কারণে অনেকে নিউট্রিনোকে ‘ভুতুড়ে কণা' বলে থাকে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম