‘এখনই চাই জামায়াতের বিচার’
৩১ মে ২০১৪যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করা বিশিষ্টজনরা বলছেন, আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে চলা বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে৷ বিচারকদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে৷ তিনি পর্যাপ্ত আইন না জেনেই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন৷ কী উদ্দেশ্যে তিনি এটা বললেন তা খুঁজে দেখার দাবিও তাঁদের৷ তাঁরা বলছেন, কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে এখনই সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করতে হবে৷
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি হিসেবে সাত মাস ধরে তদন্ত হয়েছে৷ সর্বশেষ গত দুই মাস ধরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ চলছিল৷ তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, যে কোনো সময় অভিযোগপত্র দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে৷
আইনমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে তিনটি কারণ তুলে ধরেছেন – প্রথমত, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই৷ দ্বিতীয়ত, জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা দেখতে হবে৷ এই পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ এখন এ সব অন্যান্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে৷'' আর তৃতীয়ত, অন্যান্য আইনে বলা আছে, যদি কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অপরাধ করে, তবে ওই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হবে৷ জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তাঁদের ইতিমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো তাঁদের আবার শাস্তি হলে তা আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে৷
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলে এ সব কথা বলতেন না৷ এই আইনের আওতায় অপরাধী সংগঠনকে সাজা দেয়া যায় কিনা, এটা আইনমন্ত্রী বা সরকারের না, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার৷ তাঁর উচিত রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের কোন্দল নিয়ে মাথা ঘামানো৷ জামায়াতের বিরুদ্ধে নিবন্ধনের মামলা ও সংগঠন হিসেবে মামলা দু'টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়৷ আমি তাঁর বক্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি৷''
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিচারের ব্যাপারে মানুষের কাছে ভুল সংকেত যাচ্ছে৷ জামায়াতের প্রশ্নে সরকার যদি কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে, তবে তা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রীর এই বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালের উপর চাপ সৃষ্টি হবে৷'' তাঁর মতে, একজন ব্যক্তি ১০০ বার অপরাধ করলে তাঁর ১০০ বার বিচার হতে পারে৷ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচার চলাকালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তাঁর বিচার চলেছে৷ তখন কিন্তু ট্রাইব্যুনালে নিজামীর আইনজীবী আদালতে একবারও বলেনি চট্টগ্রামে আরেকটি আদালতে নিজামীর বিচার চলছে৷
শাহরিয়ার কবিরের চেয়েও একধাপ এগিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা মারুফ রসুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে আইনমন্ত্রী বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিদ্যমান আইনেই জামায়াতের বিচার সম্ভব৷ মারুফ রসুল মনে করেন, ইচ্ছে করেই আইনমন্ত্রী এ কথা বলেছেন৷ এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, হেফাজত ইসলামকে চাঙ্গা করা হচ্ছে, তাদের পক্ষে অনেককে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে৷ এমন সময় মন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য বিশেষ কিছুর ইঙ্গিত বহন করে৷ তাঁর মতে, আইনমন্ত্রী এতটা অজ্ঞ নন যে তিনি ট্রাইব্যুনাল আইনের কিছুই জানেন না৷ হুট করেও তিনি একথা বলেননি৷
গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ব্লগার আকাশ আদিত্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে৷''
এই পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ তার মানে হলো – আইনমন্ত্রী আগে থেকেই বুঝে আছেন প্রভাব পড়বে৷ আর দেশের ১৬ কোটি মানুষ মনে করছে প্রভাব পড়বে না৷ আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি করছি আমরা৷ পাশাপাশি জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যে বিচার চলছে তা দ্রুত এগিয়ে নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি৷''