আইএস-বিরোধী সংগ্রামে দোটানায় তুরস্ক
২২ জুলাই ২০১৫জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর তৎপরতা সম্পর্কে তুরস্কের নীতি নিয়ে এতকাল অনেক সমালোচনা শোনা গেছে৷ প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ও তাঁর রক্ষণশীল ইসলামি আক পার্টি আইএস-এর সঙ্গে শত্রুতার পথ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এবার তুরস্কের ভূখণ্ডেই আইএস-এর সন্ত্রাসী হামলা সেই অবস্থান বদলে দেবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷
সোমবার তুরস্কের সীমান্তে সুরুচ শহরে এক আত্মঘাতী হামলায় ৩২ জন নিহত হবার পর এর্দোয়ান সরকারের উপর চাপ বাড়ছে৷ এই হামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে তুরস্কের সংবাদমাধ্যমে নানা মত উঠে আসছে৷ একদল মনে করে, সীমান্তের অপর প্রান্তে কোবানে শহর দখলের পর কুর্দিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আইএস এই হামলা চালিয়েছে৷ তুরস্কের সরকারকে বিব্রত করা হামলার লক্ষ্য ছিল না৷ সরকার কিন্তু এই প্রথম সরাসরি আইএস-কে হামলার জন্য দায়ী করেছে৷ হামলাকারীর পরিচয়ও জানা গেছে বলে সরকার দাবি করছে৷ প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভোতলু অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন শহরে আইএস-এর প্রতি সহানুভূতির দায়ে অনেককে আটক করা হয়েছে৷
আসলে দক্ষিণ সীমান্তে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ প্রশাসনকে বড় হুমকি বলে মনে করে তুরস্ক৷ তাই বিশেষ ভৌগোলিক গুরুত্ব সত্ত্বেও আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশনে ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত শিথিল৷ এমনকি দেশের দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটি থেকে বোমারু বিমান উৎক্ষেপণের অনুমতিও দেয়নি সরকার৷ তুরস্কের মতে, শুধু ব়্যাডিকাল ইসলামপন্থিদের উপর বোমা বর্ষণ করলে শান্তি আসবে না – বাশার আল-আসাদকেও ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে৷ অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইসলামপন্থি জোটকে সিরিয়ার ক্ষমতাকেন্দ্রে দেখতে চায় তুরস্ক৷ এ ভাবেই আইএস-কে দূরে রাখা সম্ভব বলে সে দেশের সরকারের ধারণা৷
এ দিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দি যোদ্ধারা অ্যামেরিকার সমর্থন পেয়ে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে৷ তুরস্কের সীমান্তে সিরীয় ভূখণ্ডও এই মুহূর্তে কুর্দি ওয়াইপিজি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷ তুরস্কের সংখ্যালঘু কুর্দিরাও এর ফলে উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারে এবং পিকেকে জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা বাড়তে পারে বলে সরকার আশঙ্কা করছে৷ তাছাড়া কুর্দিদের আধিপত্যের ফলে গোটা অঞ্চলের চরিত্র বদলে যেতে পারে৷ তাই আইএস অথবা ওয়াইপিজি মিলিশিয়া – কোনো গোষ্ঠীকেই তারা সিরিয়া সীমান্তে দেখতে চায় না৷
সুরুচ শহরে সন্ত্রাসী হামলার পর ইস্তানবুল শহরে মঙ্গলবার কুর্দি বিক্ষোভকারীরা সরকারের সিরিয়া-নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)