আংশিক লকডাউনের দেশে আংশিক দুর্গোৎসব
২২ অক্টোবর ২০২০বলা হয়েছে, এবার দুর্গোৎসব হবে না, হবে দুর্গা পূজা৷ তার মানে, এবার উৎসবের কোনো আমেজ থাকবে না, শুধু পূজাটা হবে স্বাস্থ্যবিধি খুব খুব খু-উ-উব কড়াকড়িভাবে মেনে৷
সত্যিই খুব মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি? ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনেই সেই আশার হাল্কা কোনো ঝিলিকও দেখা গেল না৷
এই ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু খবর খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে৷ যেমন, ‘‘অষ্টমী তিথির কুমারী পূজা এবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ রাত নয়টার পর দেশের কোনো পূজামণ্ডপ খোলা রাখা যাবে না৷ হবে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও৷ দর্শনার্থী প্রবেশেও থাকবে কড়াকড়ি৷’’
কিন্তু কুমারী পূজা বড় শহরে বন্ধ করে ছোট শহরে হতে দিলে কি আদৌ কোনো লাভ হবে? যদি কুমারী পূজায় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে তাহলে পূজার সময় যারা বড় শহর থেকে ছোট শহরের বা গ্রামের বাড়িতে গেলেন পূজা শেষে তো তারা বড় শহরে ফিরবেনই! তাহলে?
প্রতিবেদনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, এবার ‘পুজোর সংখ্যা কমানোর জন্য সরকারি তরফ থেকে এক ধরনের নির্দেশনা ছিল’ এবং সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পূজা কমানোও হয়েছে৷ পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছিল, এবার হবে ৩০ হাজার ২২৫টি মণ্ডপে৷ এর মধ্যে ঢাকায় গত বছর হয়েছিল ২৩৯টি মণ্ডপে, এবার হবে ২৩১টিতে৷ খুব বেশি না হলেও পূজার সংখ্যা কিছুটা যে কমেছে তা ঠিক৷ তবে সারা দেশে এক হাজারের চেয়ে একটু বেশি আর ঢাকায় মাত্র আটটি পূজা কমালেই দুর্গোৎসব শুধু পূজা হয়ে যায় কিনা, কিংবা এইটুকু করেই করোনা সংক্রমণ এড়ানো যাবে কিনা তা বলা খুবই মুশকিল৷
করোনার কারণে সবাইকে ঘরে বসিয়ে রাখার অবস্থা অনেক দেশেরই নেই৷সেসব দেশে লকডাউন দেয়া হয়নি, দিলেও কার্যকর হয়নি৷ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে৷
অন্যদিকে ধর্মচর্চা বিশ্বের প্রতিটি ধর্মানুরাগীরই খুব গুরুত্বপূর্ণ অধিকার৷
তবে ধর্মচর্চার ধরন এই করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশেই সাময়িকভাবে বদলাতে হয়েছে৷ সৌদি আরবে পবিত্র হজ হয়েছে খুব সীমিত পরিসরে৷ সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ যেতে পারেননি হজ পালন করতে৷ জার্মানিসহ বিশ্বের অনেক দেশে এবার বড় দিনের উৎসব আগেভাগেই বাতিল করা হয়েছে৷
মুশকিল হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতি এত উন্নত নয়, সম্পদের বণ্টন এত কম বৈষম্যপূর্ণ নয় যে ‘লকডাউন’ বললেই ‘ক্ষুদ্র’ আয়ের মানুষগুলোও মাসের পর মাস ঘরে শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেবে৷ তাই বাংলাদেশে লকডাউনকে বলতে হয় ‘আংশিক লকডাউন’ আর আংশিক লকডাউনের নামে দেখতে হয় কমেডিতে ভরপুর ট্র্যাজেডি৷
আরেকটা মুশকিল, ধর্মের বিষয়ে এক শ্রেণির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি৷
কেন যেন তারা ধর্মচর্চার সময়ও সৃষ্টিকর্তার চেয়ে মানুষকে বা ভোটারকে, কিংবা সরকার বা অন্য কোনো ক্ষমতাবানকে বেশি খুশি রাখার চেষ্টা করেন৷ নইলে যে পূজাকে গত বছর দুর্গোৎসব বলা গেছে, এবার তাকে শুধু দুর্গা পূজা বললেই করোনা ভাইরাস ‘পালাই, পালাই’ বলে চলে যাবে- এ আশা কেউ করতে পারে?