আংকারার বস্তির ভোটারদের মাঝে অনিশ্চয়তা
আংকারার নিম্ন আয়ের মানুষরা আগের তুলনায় প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের আমলে সামাজিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি পেয়েছেন৷ তাসত্ত্বেও আসন্ন গণভোটে এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত কিনা – সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তাঁরা৷
ধোঁয়ার মধ্যে বসবাস
তুরস্কের নিম্ন আয়ের মানুষরা যে এলাকায় বাস করেন, সেখানকার আকাশ শীতের মাসগুলোয় ধোঁয়ায় ঢাকা থাকে৷ মূলত ঘর গরম রাখতে যে কয়লা ব্যবহার করা হয়, তারই ধোয়া জড়ো হয়ে থাকে এভাবে৷ এর্দোয়ান নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনা পয়সায় কয়লার সংস্থান করে দিয়েছেন, দিয়েছেন অন্যান্য সুবিধাও৷ অবশ্য এতেও তাঁর পকেটে ভোট পড়বে কিনা, তা নিশ্চিত নয়৷
দ্বিধান্বিত ভোটাররা
আগামী রবিবার তুর্কিরা এক গণভোটে অংশ নেবেন, যার মাধ্যমে তুরস্কের সংসদীয় ব্যবস্থা বদলে গিয়ে আদৌ এর্দোয়ান এবং তাঁর একেপি দলের নেতৃত্বাধীন প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় রূপ নেবে কিনা – তা নির্ধারণ করা হবে৷ তবে গণভোটে এর্দোয়ানের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় কিছু কম নয়৷
গরিবের দল
‘‘আমার স্বামী যখন বেকার ছিলেন, তখন আমি ঘর গরম রাখার কয়লা কোথায় পাবো, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম৷ একেপি আমাদের বিনা পয়ায় কয়লা দিয়েছে৷ এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি যে, দলটি গরিবের জন্য৷’’ এ কথা বলেন তিন সন্তানের মা এমেল ইলদিরিম৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘আগে ডাক্তার দেখানো অনেক কঠিন ছিল৷ কিন্তু এখন হাসপাতালগুলো গরির রোগীদের নেওয়ার ব্যাপারে অনেক উদার৷’’
কুর্দদের ভোট
ইলদিরিম, যিনি কুর্দ, তুরস্ক রাষ্ট্র এবং কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কেও উদ্বিগ্ন৷ ‘‘এর্দোয়ান যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট পান, তাহলে পরিস্থিতি ভালো হতে পারে৷ তিনি বলেছেন, তিনি শান্তির পক্ষে,’’বলেন ইলদিরিম৷ তবে ‘‘সেলাহাতিন দিমিত্রাসকে (কুর্দি বিরোধী নেতা) যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তিনি বলবেন যে, এর্দোয়ান কুর্দিদের তাঁদের রক্তের মধ্যে ডুবিয়া মারবে৷ তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য কঠিন’’, বলেন তিনি৷
সংশয় বাড়ছে
ক্যাম্পেইনের ব্যানার দিয়ে একটি কোওচ ঢেকে রাখা হয়েছে৷ আংকারার এই এলাকায় এর্দোয়ানকে নিয়ে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে৷ কলিজার স্যান্ডউইচ বিক্রেতা ২৫ বছর বয়সি আলী বলেন, ‘‘গত ১৫ মার্চ তারা এখানকার মানুষকে কয়লার ব্যাগ দিয়েছে৷ কিন্তু বসন্তে কয়লা কেন? শীত তো শেষ৷ এটা নিঃসন্দেহে তারা করেছে গণভোটে জেতার জন্য৷ এই হলো ভোটের রাজনীতি৷’’
সিস্টেমে সমস্যা
আলী বলেন, তাঁর কাছে বড় সমস্যা সরকারের দুর্নীতি৷ ‘‘আমি ঠিক জানি না যে, সমস্যাটা সিস্টেমে নাকি যাঁরা সিস্টেম ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে৷’’ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম নিয়েও আমার একই প্রশ্ন রয়েছে৷ এটা কি ধর্ম নাকি যাঁরা এই ধর্মের অনুসারী, তাঁরাই নানা সমস্যা তৈরি করছেন? আমার কথা শুনলে মনে হতে পারে যে, আমি ‘না’ ভোট দেবো৷ তবে আসল কথা হলো, আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি৷’’
স্বামীর মতই তাঁর মত
তিন বছর বয়সি আয়েশা তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাঁর মা, যিনি নাম জানাতে চান না বা ছবি তুলতে চান না, বলেছেন যে তিনি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন শুধুমাত্র এইজন্য যে, তাঁর স্বামীও ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন৷
বিনিয়োগ দরকার স্কুলে
আংকারার বস্তির মুস্তফা তুহরান (ছবিতে নেই) জানান, আশেপাশের স্কুলগুলোর উন্নতি করা হয়নি৷ ফলে ভালো মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিনা পয়সায় কয়লা পাই, কেননা রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে কর আদায় করে৷ এটা বিনিময়ে কিছু দেওয়ার মতো ব্যাপার৷ কিন্তু আমরা চাই, শিক্ষাখাতে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করা হোক, যাতে আমাদের জন্য আরো সম্ভাবনা তৈরি হয়৷’’
প্রতিবেদন: ডিয়েগো কুপোলো/এআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ