‘অ্যান্ড্রয়েড’ ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন জবস
২৫ অক্টোবর ২০১১গত ৫ অক্টোবর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন স্টিভ জবস৷ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে জবস'এর এই চির বিদায় প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য ছিল এক বড় ধাক্কা৷ খুব ছোট পর্যায় থেকে অ্যাপলকে বিশ্বের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন জবস৷ সাফল্য তাঁকে ঘিরে ছিল জীবনের অনেকটা সময়৷
সন্তানের জন্য আত্মজীবনী
স্টিভ জবসকে নিয়ে মানুষের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে বৈকি৷ জবস তাঁর ব্যক্তিজীবনকে সবসময়ই গণমাধ্যম থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন৷ তবে মৃত্যুর আগে আত্মজীবনী প্রকাশে আগ্রহী হন তিনি৷ লেখালেখির সেই দায়িত্ব পান ওয়াল্টার আইস্যাকসন৷ জবস চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তানরা যেন বাবার সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারে৷ সেজন্যই আত্মজীবনী৷
২৪ অক্টোবর জবস এর আত্মজীবনী প্রকাশ হয়েছে৷ এই গ্রন্থের একটি দিক নিয়ে গণমাধ্যমে এখন ব্যাপক আলোচনা৷ গুগল'এর ‘অ্যান্ড্রয়েড' অপারেটিং সিস্টেমকে একেবারের সহ্য করতে পারতেন না জবস৷ এই সফটওয়্যারটির সঙ্গে অ্যাপলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে৷ জবস তাই মনে করতেন, অ্যান্ড্রয়েড হচ্ছে আইওএস এর চুরি করা সংস্করণ৷ অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করতে বিপুল অর্থ খরচের পক্ষে ছিলেন এই প্রযুক্তি কারিগর৷
অ্যান্ড্রয়েড বিরোধী লড়াই
অ্যান্ড্রয়েড এর প্রতি জবস এর এই মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় অ্যাপলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে৷ সরাসরি গুগল এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও অ্যাপল এমন কয়েকটি স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যারা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে৷ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে অনেক গুগল পণ্যকে জায়গা দেওয়া হয়নি৷ ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আসার দশ মাস পরে গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম প্রকাশ করেছিল৷ তারপর থেকেই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়৷ যদিও সেসবের ভুক্তভোগী মটোরোলা, স্যামসাং এর মত মুঠোফোন নির্মাতারা৷ অ্যাপলের আপত্তির কারণেই অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি মত দেশে স্যামসাং এর গ্যালাক্সি ট্যাব ১০.১ বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছে৷
জবস বলেছিলেন, ‘‘আমি অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করতে যাচ্ছি৷ কেননা এটি একটি চুরির পণ্য''৷
জবস এর প্রকাশিত আত্মজীবনীর অংশবিশেষ থেকে পাওয়া গেছে এই উদ্ধৃতি৷ জবস আরো বলেছিলেন, ‘‘এই অন্যায় (অ্যান্ড্রয়েড) সংশোধনে প্রয়োজনে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি লড়াইয়ে প্রস্তুত৷ এজন্য ব্যাংকে জমা থাকা অ্যাপলের ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরোটা খরচেও আপত্তি নেই৷''
বিতর্কিত বিভিন্ন দিক
বলাবাহুল্য, জবস এর আত্মজীবনীতে তাঁর জীবনের অনেক বিতর্কিত দিকও উঠে এসেছে৷ অ্যাপল'এ সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ সবসময় সুখকর ছিল না৷ অ্যাপল সফল হলেও জবসকে একজন সফল ম্যানেজার মানতে রাজি নন লেখক আইস্যাকসন৷ তবে জবস নিজের ব্যক্তিজীবনকে সবসময় সাদামাটাই রেখেছেন৷ বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েও তিনি পালো অলটো'তে একটি মাঝারি ধরনের বাড়িতে জীবন কাটিয়েছিন৷ অর্থ যাতে তাঁকে বদলে দিতে না পারে সেদিকেও সচেষ্ট ছিলেন জবস৷
অ্যাপলের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যারা নিজেদের জীবনধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের সম্পর্কে কটূক্তি করতেও ছাড়েননি তিনি৷ আইস্যাকসনকে জবস বলেছিলেন, ‘‘আমি অনেককে দেখেছি রোলস-রয়েস আর নতুন বাড়ি কিনতে৷ তাদের স্ত্রীরাও প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন৷ এরা একসময় খুব মার্জিত ছিল৷ কিন্তু অর্থ তাদেরকে বদলে দিয়েছে''৷
উল্লেখ্য অনলাইন শপগুলোতে স্টিভ জবস'এর আত্মজীবনীর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে৷ অ্যামাজনে গত কয়েকদিন ধরেই বিক্রির শীর্ষে রয়েছে এই বই৷ ইংরেজি ছাড়াও আরো কয়েকটি ভাষায় পাওয়া যাবে এই আত্মজীবনী৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন