সেনেটে বোরকা পরে মুসলিমদের বিদ্রুপ
১৭ আগস্ট ২০১৭হ্যানসন বোরকা পরে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে এই পোশাক নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করে৷ সেনেটে ঢুকে তিনি এই পোশাক খুলে ফেলেন৷ তাঁর মতে, এই পোশাক জঙ্গিবাদের বিস্তারে ভুমিকা রাখতে পারে৷ ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বোরকা কি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়?''
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ব্র্যান্ডিস তাঁর এই উস্কানিমূলক আচরণের কারণ জানতে চাইলে হ্যানসন এই প্রশ্ন তোলেন৷ ‘‘জঙ্গিবাদ এখন আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় হুমকি৷ অনেক নাগরিকই বিষয়টি নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত,'' যোগ করেন তিনি৷
দেশটির সর্বোচ্চ আইনজীবী ব্র্যান্ডিস জানান, তাঁর রক্ষণশীল সরকারের এমন কোন পরিকল্পনা নেই৷ মুসলিম না হয়েও বিদ্রুপ করে বোরকা পরার তাঁর এই আচরণ মুসলিমদের জন্য পীড়াদায়ক বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘একটা জনগোষ্ঠীকে বিদ্রুপ করা, তাঁদের এক ঘরে করে রাখা এবং তাঁদের পোশাক নিয়ে উপহাস করা খুবই মর্মান্তিক৷ এই কাজ আপনি কেন করলেন তার জবাব দিতে হবে,'' বলেন ব্র্যান্ডিস৷
কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া ব্র্যান্ডিস এ-ও বলেন যে, ইসলামের কঠোর অনুশাসন যাঁরা মেনে চলেন, তাঁরা দেশের আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল৷ তিনি বলেন, ‘‘এদেশে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম অস্ট্রেলিয়ান আছেন৷ তাঁদের অধিকাংশই আইন মানেন এবং ভালো নাগরিক৷''
ব্র্যান্ডিসের বক্তব্যের পর তাঁর লেবার ও সবুজ দলের রাজনৈতিক বিরোধীরাও দাঁড়িয়ে করতালি দেন৷
এই ঘটনার পর সেনেটের অনেকেই হ্যানসনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন৷
তাঁর এই ‘কাজ'-কে ‘বিরক্তিকর' বলে মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র সেনেটর ড্যারিন হিঞ্চ৷ স্কাই নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘পলিন হ্যানসন অস্ট্রেলিয়ার একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মকেই শুধু উপহাস করেননি, তিনি সেনেটের মতো একটি সম্মানিত প্রতিষ্ঠানেরও উপহাস করেছেন৷''
লেবার দলের সেনেটর স্যাম দাস্তিয়ারি মনে করেন, সস্তা জনপ্রিয়তা পেতেই হ্যানসন এ কাজ করেছেন৷
দলে দলে এশিয়ানদের আগমনে অস্ট্রেলিয়া বিপদে পড়ছে, এমন মন্তব্য করে নব্বই দশকের দিকে হ্যানসন প্রথম আলোচনায় আসেন৷
মাঝে প্রায় এক যুগ রাজনীতির বাইরে থেকে আবার ফেরেন ২০১৪ সালে৷ মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতিও পান৷ দু'বছর পর অতি ডানপন্থি দল ওয়ান নেশন পার্টির প্রধান হয়ে সেনেটর নির্বাচিত হন৷
সেনেটে যোগ দিয়ে প্রথম ভাষণেই তিনি বলেন, ইসলাম এমন একটি সংস্কৃতি ও ধারণা, যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই যায় না৷
হ্যানসন অবশ্য তাঁর এই কর্মকাণ্ডে মোটেই অনুতপ্ত নন, একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কাজটি কি খুব উগ্র কিছু হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে৷ আমার মনে হয় পরিষ্কার বার্তাই দিতে পেরেছি৷''
জেডএ/জেডএইচ (এএফপি)
বোরকার সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক কোথায়? মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷