1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবশেষে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই খালেদা

৬ অক্টোবর ২০১৮

সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই খালেদাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল- বিএসএমএমইউতে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু এতদিন সেখানে চিকিৎসকদের ওপর আস্থাহীনতার কথা বলছিলেন খালেদা জিয়া৷

https://p.dw.com/p/365jk
ছবি: Getty Images/M. Uz Zaman

খালেদা জিয়ার পছন্দের হাসপাতাল ছিল ইউনাইটেড৷ তা না হলে অ্যাপোলো হাসপাতালেও চিকিৎসায় রাজি ছিলেন তিনি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে তাঁকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়েছে শনিবার বিকেলে৷

কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য৷ শুরুতে খালেদা জিয়ার অসুখ ‘গুরুতর কিছু নয়’ বললেও, পরে তাঁকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়৷ 

কিন্তু পরীক্ষা করাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গেলেও তাঁকে সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য রাজি করানো যায়নি৷ খালেদা ও তাঁর দলের নেতাদের অভিযোগ ছিল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তাঁর সঠিক চিকিৎসা সম্ভব নয়৷

এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারও করা হয়৷ কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, তাঁকে সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে৷ অবশেষে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই ভর্তির নির্দেশ দেন৷ তবে একই সাথে নির্দেশ দেয়া হয় তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের৷

বিএসএমএমইউর চিকিৎসক আবদুল জলিল চৌধুরী ও বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন৷ আরো তিনজন চিকিৎসক থাকবেন, যাঁরা  সরকার সমর্থক  চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ বা বিএনপি সমর্থক ড্যাব-এর সদস্য নন৷

আদালত আরো নির্দেশ দেন যে, খালেদা জিয়া তাঁর পছন্দ অনুসারে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান বোর্ডে থাকতে পারবেন৷ তবে বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাখতে পারবেন

আদালতের নির্দেশনা মেনে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়৷ এর সদস্যরা হচ্ছেন কার্ডিওলজির অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ৷

জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিন জনকে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাখা হয়েছে, বাকি দুজন সরকার নিযুক্ত ‘নিরপেক্ষ’ চিকিৎসক৷

বোর্ড গঠনের পর শনিবার বিকেলে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয় খালেদা জিয়াকে৷ বিএসএমএমইউর উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়াকে কেবিন ব্লকের ৬১২ নম্বর কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে৷

প্রাথমিকভাবে তাঁকে ১৫ দিন এখানে রাখা হবে৷ তারপর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচেনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ রোববার দুপরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করবে৷ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমাও রয়েছেন৷

শায়রুল কবির খান

খালেদা জিয়ার প্রেস উইং-এর সদস্য শায়রুল কবির খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া তাঁর চিকিৎসা চেয়েছেন৷ এটা নিয়ে রাজনীতি করেননি বা করতে চাননি৷ তাঁর শরীর ভালো নয়৷ চিকিৎসা প্রয়োজন৷ তিনি তাঁর পছন্দের হাসপাতাল ইউনাইটেডে চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলেন৷ যে কারোর তাঁর পছন্দের হাসপাতাল ও চিকিৎসক বেছে নেয়ার অধিকার আছে৷ কিন্তু তা তিনি পাননি৷ কিন্তু তাঁকে চিকিৎসা তো নিতে হবে৷ তিনি তো বিনা চিকিৎসায় থাকতে পারেন না৷ তাই চিকিসার জন্যই বিএসএমএমইউতে গেছেন৷’’

সরকারই বরং অকারণে খালেদার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে বলে পালটা অভিযোগ শায়রুলের৷

গত জুনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের একটি দল কারাগারে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন৷ তাঁরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার একটি গাইড লাইনও দেন তখন৷

সেই দলে ছিলেন নিউরো সার্জন ডা. সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়েছে৷ সেখানে এমআরআইসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু যন্ত্রপাতি নেই৷ তবে আদালতের নির্দেশে এরই মধ্যে তা আনা হয়ে থাকলে ভিন্ন কথা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ৷ তাঁর ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, চোখের সমস্যা, ইউরিন ইনফেকশনসহ আরো অনেক সমস্যা আছে৷ এখন আদালতের নির্দেশ মেনে সরকার ও হাসপাতাল যদি সমন্বয় করে চিকিৎসা করে, তা করতে পারে৷ কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত কেমন হবে তা তো এখনই বলা যাচ্ছে না৷’’

ডা. সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান

এদিকে বিএসএমএমইউ-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের জানান, ‘‘হাসপাতালে আনার পর বোর্ডের প্রধান ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী তাঁকে দেখেছেন৷ রবিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১ টায় তাঁরা বোর্ড মিটিং করবেন৷ বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ কারারক্ষী, আনসার সদস্য ও পুলিশের সমন্বয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷’’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে স্বজন বা গৃহপরিচারিকা কেউ থাকবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কারাবিধি অনুযায়ী যা করার তা-ই করা হবে৷ কারাগারে তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, এখানেও তাঁরা থাকবেন৷’’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ এই প্রথম কোনো হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনি৷