কেস সমাধানের উপায়
৩১ জানুয়ারি ২০১৪অপরাধ দেশের সীমানা চেনে না৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের খোঁজে জার্মান পুলিশও যথেষ্ট তৎপর৷ বিজ্ঞান ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিই এই কাজে তাদের গোপন অস্ত্র৷
গত শতাব্দীর আশির দশকে হারাল্ড ড্যার্ন অপরাধ দমনের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি গড়ে তোলার কাজে যুক্ত ছিলেন৷ ‘অ্যামেরিকান প্রোফাইলিং'-এর মতোই বিশ্লেষণের পদ্ধতি এটি৷ ড্যার্ন বলেন, ‘‘এফবিআই-এর কাজের পদ্ধতির সঙ্গে এর কিছুটা মিল অবশ্যই রয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে আমরা সোশ্যাল সায়েন্স অনুসরণ করে ‘রিকনস্ট্রাকশন' নীতির উপর বেশি জোর দিয়েছি৷ অর্থাৎ শুধু অনুমানের ভিত্তিতে অগ্রসর না হয়ে কী ঘটেছিল, ধাপে ধাপে তা নিখুঁতভাবে সাজানোর প্রচেষ্টাই হলো এর লক্ষ্য৷''
কেস অ্যানালিসিস একা নয়, টিমের সঙ্গে মিলেমিশে করতে হয়৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের দক্ষতার ভিত্তিতে ঘটনা সম্পর্কে একটি তত্ত্ব খাড়া করেন৷ হারাল্ড ড্যার্ন বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই তাদের পছন্দের থিয়োরির দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে৷ টিমের মধ্যে তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সেই তত্ত্ব প্রমাণ করতে হয়৷ বাকিদের বোঝাতে হয়৷ তাদের মনে সন্দেহ থাকলে সেই তত্ত্ব নস্যাৎ হয়ে যায়৷ অর্থাৎ টিমের মধ্যে ভুল তত্ত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ তাই জার্মানিতে টিমওয়ার্ক ও আলোচনার প্রক্রিয়া যে কোনো অপরাধের ঘটনার বিশ্লেষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷''
দিনের পর দিন ঘরের মধ্যে টিমের আলোচনা চলে৷ অত্যন্ত নিঁখুতভাবে অপরাধের ঘটনা ‘রিকনস্ট্রাকশন' করার চেষ্টা চলে সেখানে৷ হারাল্ড ড্যার্ন বলেন, ‘‘এই ঘর ঘটনার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এখানে দিনের পর দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরে বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন৷ গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁরা প্রতিটি বিষয় বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যান৷''
২০০০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির সীমান্তে বেশ কয়েকজন নারীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল৷ একজন অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যান৷ হারাল্ড ড্যার্ন বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি অপরাধের ঘটনার নির্দিষ্ট একটা ধারা ছিল৷ আক্রান্ত নারীরা নিশ্চিন্ত মনে রাতে কোথাও যাচ্ছিলেন৷ আততায়ী আচমকা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের উপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে৷ যতক্ষণ তাদের জ্ঞান ছিল, ততক্ষণ অত্যাচার চলেছে৷ তাদের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত আততায়ী থামেনি৷''
পুলিশ তখন এই রহস্য ভেদ করতে পারেনি৷ হামলাগুলির ক্ষেত্রে নানা রকম অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল৷ তাই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না অপরাধী একজন না একের বেশি৷ ড্যার্ন বলেন, ‘‘সিরিজ হামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সব ঘটনায় একজন মাত্র অপরাধী জড়িত কিনা৷ বিশেষ করে যখন অপরাধের প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়৷ প্রথম দিকের হামলাগুলির ক্ষেত্রে নৃশংসভাবে আঘাত করা হয়েছিল৷ পরের দিকে ছুরি চালিয়ে শরীর ছিন্নভিন্ন করার প্রবণতা দেখা গেছে৷ প্রথমে আমরা ঘটনাগুলি আলাদা করে দেখে বুঝতে পারলাম, প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বিচারে নারীদের দ্রুত হত্যা করা হয়েছে৷''
তখন বোঝা গেল, হত্যার ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন নয়৷ একজন অপরাধীর খোঁজ চালিয়ে তাকে কিছুদিনের মধ্যেই ধরা সম্ভব হয়েছিল৷ জার্মানিতে বছরে এমন প্রায় ১০০টি অপরাধের ঘটনার বিশ্লেষণ করতে হয়৷ সম্ভাব্য অপরাধীদের সংখ্যা আগে থেকেই কমিয়ে আনা যায়৷ হারাল্ড ড্যার্ন বলেন, ‘‘এমন কেস আসে, যা দেখলে দুঃখ হয়৷ শুধু ভুল সময় ভুল জায়গায় থাকার কারণে মানুষ অপরাধের শিকার হয়৷ একটা প্রাণের আলো হঠাৎ নিভে যায়৷ এমন আবেগ এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল৷''
এমন মুহূর্তও টিমের মধ্যে আসে৷ তখন পরের কেসের রহস্য সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করতে অনুপ্রেরণা পান তাঁরা৷