‘অনেকে বাংলা জানে না বলতে গর্ববোধ করে’
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি বিষয়ে বদরুদ্দিন উমর একাধিক বই লিখেছেন৷ করছেন ব্যাপক গবেষণা৷ তাঁর কাছে জানতে চাই, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে৷ তিনি বলেন, ওটা একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল৷ এই যে তিউনিশিয়া বা মিশরে যে অভ্যুত্থান এখন দেখা যাচ্ছে, এরকম অভ্যুত্থান বায়ান্ন সালেও হয়েছিল৷ সেসময় মুসলিম লীগ মানুষের উপর যত নির্যাতন করেছিল, শোষণ করেছিল, তার বিরুদ্ধে একটা বিক্ষোভ-ক্ষোভ মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভু্ত হয়েছিল৷ সেটাই একটা বিস্ফোরণ আকারে, একটা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল৷ সেই গণঅভ্যুত্থান ২১শে ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২২শে ফেব্রুয়ারি বিশাল আকার ধারণ করেছিল এবং পরের কয়েকদিন বলা যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই অভ্যুত্থান চলেছিল৷
আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই প্রফেসরের কাছে প্রশ্ন ছিল, বায়ান্ন'র ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে ঠিক কতজন মারা গিয়েছিলেন? বিশেষ করে পুলিশের নথিপত্র কিংবা সরকারি কোন হিসাবে কি মৃতের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল? উত্তরে বদরুদ্দিন উমর বলেন, পুলিশ মনে হয় না সেসময় কোন রেকর্ড করেছিল৷ এমনকি যখন বিষয়টির তদন্ত হলো, সেই তদন্তের মধ্যেও এব্যাপারে কোন উল্লেখ ছিল না৷ কিন্তু প্রতক্ষ্যদর্শীদের বিবরণ দেখা যায়, যে কয়জন নিহতের নাম আমরা জানি, তারচেয়ে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি৷
রাষ্ট্রভাষা বাংলা
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি৷ ৫২ থেকে ৫৬ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের রূপরেখা জানতে চাইলে লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার বদরুদ্দিন উমর বলেন, ৫৪ সালের নির্বাচনের আগে যে ২১ দফা ছিল তাতে বলা হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রীর ( নামুখ্যমন্ত্রীরবাসভবনকে বাংলা একাডেমি করতে হবে৷ কিন্তু ৪৮ বা ৫২ সালে যেরকম আন্দোলন হয়েছিল, সেরকম আন্দোলন পরে আর হয়নি৷ কেননা, তার কোন প্রয়োজনও হয়নি৷ ৫২ সালের পরে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আর কোন উক্তিও করেনি৷
ভাষার প্রতি ভালোবাসা
বাংলা ভাষার প্রতি মধ্যবিত্ত বাঙালি এবং উচ্চবিত্তের ভালোবাসা কমে গেছে গেলে বলে মনে করেন বদরুদ্দিন উমর৷ তিনি বলেন, বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এখন আর এই ভাষার প্রতি মধ্যশ্রেণি বা উচ্চশ্রেণির কোন ভালোবাসা নেই৷ এখানে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যাতে অভিভাবকরা বাচ্চাকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করছে৷ অনেকে বাংলা ঠিকভাবে শিখছে না৷ এখনো অনেকে বাড়িতে বা পরিবারে আছেন যে, বাংলা জানে না বলতে গর্ববোধ করেন৷
তিনি বলেন, বাংলার প্রতি মানুষের যে একটা অভিমান ছিল, গর্ব ছিল, সেটা কিন্তু এখন আর সেভাবে দেখা যায়না৷
প্রমিত বাংলা বানান
বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানান নিয়েও আপত্তি রয়েছে এই ভাষা আন্দোলনকারীর৷ তাঁর মতে, এর ফলে ভাষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে৷ তাঁর কথায়, যেভাবে এখন বাংলা লেখা হচ্ছে, তাতে বলা যেতে পারে এখন বানান ভুল বলে আর কিছু নেই৷ আর যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারছে, সেটাই চলছে এখানে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক