‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না’
৩০ মার্চ ২০১১নূর মোহাম্মদ শেখ তৎকালীন ইপিআর-এ যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে৷ এর কয়েক বছর ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন তিনি৷ সেসময় যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদকে একাধিক মেডেল প্রদান করে পাকিস্তান সরকার৷
ছুটি থেকে যুদ্ধে
একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতে ছুটিতে ছিলেন এই সাহসী সেনা৷ কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবরে আর শান্ত থাকতে পারেননি তিনি৷ বরং যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে৷ সাহসিকতার সঙ্গে লড়তে থাকেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে৷
পরিবার নিয়ে ভাবনা
একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ে নূর মোহাম্মদকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন অপর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল৷ ডয়চে ভেলেকে নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে নূর মোহাম্ম অত্যন্ত সাহসী এবং ধীরস্থির ছিলেন৷ বিপদে কখনো বিভ্রান্ত হতেন না তিনি৷
বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বাস করছেন মোস্তফা কামাল৷ তিনি জানান, নূর মোহাম্মদ তাঁর পরিবারের কথা প্রায়ই বলতেন৷ স্ত্রী, সন্তানদের কাছে আর কখনো ফেরা হবে কিনা তা জানতেন না নূর৷
ফেরা হয়নি
পরিবারের কাছে আর ফেরা হয়নি নূর মোহাম্মদের৷ একাত্তরের ৫ই সেপ্টেম্বর সুতিপুরে শত্রুপক্ষের মর্টারের গোলার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি৷ তবে, সেই যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন নূর৷ সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন তিনি৷ মোস্তফা কামালের বক্তব্য অনুযায়ী, নূর এমন একটি অবস্থানে ছিলেন যেখানে গুলি করে তাঁকে মারা সম্ভব ছিল না৷ তাই, শত্রুরা অন্তত ৩০টি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করতে৷
মৃত নূরকে নির্যাতন
নূর মোহাম্মদের মরদেহের উপরও অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা৷ এমন বীভৎস নির্যাতন মোস্তফা কামাল সেদিনই প্রথম দেখেছিলেন৷ তিনি বলেন, বেয়নেট দিয়ে নূর এর চোখ উপড়ে ফেলেছিল শত্রুরা৷ তাঁর মাথার ঘিলু বের হয়ে যায়৷ মৃত নূরের উপর উপর্যুপরি বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্তানিরা৷
সহযোদ্ধারা পরবর্তীতে নূর মোহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করেন৷ এরপর তাকে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র কাশীপুরে সমাহিত করা হয়৷ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে৷
নূর এর পরিবার
নূর মোহাম্মদ এর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে যশোর এবং আশেপাশের শহরে বসবাস করছেন৷ নূরের একমাত্র ছেলে এসএম গোলাম মোস্তফা কামাল জানান, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সহায়তায় সরকার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি ৷
হতাশ মোস্তফা
নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা মোস্তফা কামালও কিন্তু হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন ঠিকই, তবুও স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর কাঁদলেন মোস্তফা৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না৷ আমার খুব দুঃখ লাগে যে, কেন এই দেশের মানুষ ৪০ বছর পর বুঝতে পারলো মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা উচিত৷ এতদিন কেন হয়নি?''
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন