অনেক পিটুনি, ধরপাকড়ের পর সামান্য অগ্রগতি
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মারধর ও পুলিশের ধরপাকড়ের শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা৷ অবশেষে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে৷
আন্দোলনের শুরু
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হয়৷ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ আছে৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ এই কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার আনার দাবিতে আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থীরা৷
ঢাবি উপাচার্যের বাসা ভাঙচুর
৮ এপ্রিল শাহবাগে শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত একটি র্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিণের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়৷ সেই সময় পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে৷ এরপর সারাদিনই ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে৷ পরে রাত একটার দিকে আন্দোলনকারী ছাত্ররা উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে৷ এছাড়া রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এতদিন অগ্রগতি হয়নি
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে দেয়া এক ভাষণে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন৷ এ বিষয়ে কাজ করতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনাও দেন৷ কিন্তু তারপর এতদিন অগ্রগতি দেখা যায়নি৷
আবার আন্দোলন
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কোটা বাতিল বা সংস্কারে সরকারের সক্রিয় কোনো কার্যক্রমের দেখা না পেয়ে পরবর্তী করণীয় জানাতে গত শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা৷ সেই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে৷ এরপর সোমবারও শহিদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা৷
অভিযোগ অস্বীকার
হামলার জন্য যাদের দায়ী করা হয়, তাদের একজন ঢাবি বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন রহমান৷ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা হামলা করিনি, আমরা তাদের প্রতিহত করেছি৷ আমরাও কোটা সংস্কারের পক্ষে৷ প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ কিন্তু জামাত-শিবির, ছাত্রদলের কিছু লোক এই ইস্যু ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল৷ আমরা তা করতে দেইনি৷ আমরা ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করছি৷’’
আন্দোলনকারীদের আটক
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হাসানকে শাহবাগ থানা পুলিশ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে৷ ‘‘তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে৷ তাঁর সঙ্গে তরিকুল ইসলাম এবং জসিমউদ্দিন নামে আরো দু'জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে,’’ বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷
আটকদের ছেড়ে দেয়ার দাবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্ববায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলেক বলেন, কোটা সংস্কারের জন্য সোমবার যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা আগে করা হলে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হতো না৷ ‘‘আমরা চাই, কোটা সংস্কারে আর দেরি করা হবে না৷ আটকদের ছেড়ে দিতে হবে, আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দিতে হবে এবং হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আইনের আওতায় আনতে হবে,’’ মঙ্গলবার বলেন তিনি৷
হেনস্তার শিকার শিক্ষক
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ‘উদ্বিগ্ন অভিবাবক ও নাগরিক’দের আয়োজনে মঙ্গলবার ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল৷ সেই সময় পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহকে ধরে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়৷ একই সময়ে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
প্রায় তিন মাস পর অগ্রগতির লক্ষণ
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় তিন মাস পর সোমবার বিকেলে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটা সংস্কারে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে৷ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে৷