‘অনার কিলিং’ নিয়ে কঠোর আইন
৭ অক্টোবর ২০১৬পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে মহিলাদের হত্যা করে থাকে প্রায় ক্ষেত্রেই মেয়েটির নিজের পরিবারের সদস্যরা৷ পাকিস্তানে নতুন ‘অনার কিলিং' বিরোধী আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে৷ গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সংসদে বিল পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত নিহতের পরিবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করলে হত্যাকারী ক্ষমা পেয়ে যেতো৷
বিলের বয়ানে বলা হয়েছে, ‘‘প্রতি বছর শত শত (মহিলা) পারিবারিক সম্মানের নামে হত্যার শিকার হন৷এই আইন এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য আবশ্যক৷'' এর আগে ২০০৫ সালেও ‘অনার কিলিং' আইনে একটি সংশোধন আনা হয়েছিল৷ হত্যাকারীরা যাতে নিজেদের নিহতের সম্পত্তির ‘উত্তরাধিকারী' হিসেবে পেশ না করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সেই সংশোধনী আনা হয়েছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও বিচারকের অপরাধীকে ক্ষমা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা ছিল, যদি নিহতের পরিবারের অপরাপর সদস্যরা হত্যাকারীকে ক্ষমা করে৷ বৃহস্পতিবার নতুন বিল পাস হওয়ার ফলে এখন বিচারকরা নিহতের পরিবার ক্ষমা করলেও অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবেন৷
পাকিস্তানের নারী অধিকার সংস্থা ‘অওরত ফাউন্ডেশন'-এর পরিচালক মুমতাজ মুঘল ডয়চে ভেলেকে জানান, পাকিস্তানে গত বছর ১৭৮ জন মহিলাকে পরিবারের সম্মানের নামে হত্যা করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত পরিবারের সদস্যরাই অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকে৷ অনেক ক্ষেত্রে পরিবারপ্রধান অপরাধীদের ক্ষমা করে দেন৷'' প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য এক পর্যায় আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন৷ বর্তমান বিলটি বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠন এবং সমাজের উদারপন্থি অংশের প্রশংসা পেলেও, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি বিলের বিরোধিতা করে বলেছে, এই বিল কোরান শরিফ ও মহানবীর নির্দেশাবলীর বিরোধী৷
মাওলানাদের সংগঠন ‘কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি'ও নতুন আইনের সমালোচনা করেছে৷ পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ খান শেরানি ইসলামাবাদে রিপোর্টারদের বলেন, ‘‘এই আইনের মর্ম আমরা যা বুঝেছি, তা এই যে, মুসলমান পরিবারগুলোকে বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতা ভঙ্গ করতে বলা হচ্ছে৷ এই আইন মহিলাদের ঘর ছেড়ে যাওয়া ও বাইরে কাজ করার পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে৷''
গত জুলাই মাসে মডেল ও অভিনেত্রী কান্দিল বেলোচ তাঁর ভাইয়ের হাতে নিহত হন৷ পরিবারের সম্মান বাঁচানোর উদ্যেশ্যেই হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে৷ পাকিস্তানের প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিক ‘ডন' কান্দিলের হত্যাকে পাকিস্তানে মহিলারা যে যৌনবাদ ও নারীবিদ্বেষের সম্মুখীন, তার পরিচায়ক বলে বর্ণনা করে৷ অপরদিকে লাহোরের জামায়াতে-ইসলামি দল কান্দিলকেই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করে৷ তবে পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মীরা বলেছিলেন, কান্দিলের মৃত্যুর ফলে পাকিস্তানে মহিলাদের সমানাধিকার পাবার সংগ্রাম আরো জোরদার হবে৷
সেই ভবিষ্যদ্বাণী দৃশ্যত মিথ্যা হয়নি৷
প্রতিবেদক: শামিল শামস/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
প্রিয় পাঠক, আইন কঠোর করার কারণে কি পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ কমতে পারে? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে৷