অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা
৭ জুলাই ২০১৭ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭(১) উপধারা, ৮০ ও ৮৬ ধারা এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪-এর ৫ (১.৩), ৫ (১.৫) ও ৫ (১.৯) বিতর্কিত ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অনলাইন গণমাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকেও তা মেনে চলতে হবে, যা গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশের অন্তরায় এবং সংবিধান স্বীকৃত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার পরিপন্থি৷'
নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রস্তাবিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত করার যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার বাধাগ্রস্ত করতে পারে৷
এ নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়৷ বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা এবং এর মাধ্যমে এ সব সংস্থাকে গণমাধ্যম নীতিমালার আওতাভুক্ত করা অযৌক্তিক৷
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালাটি যুগোপযোগী করতে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্টরা যে মতামত ও সুপারিশ করেছে – তা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি৷ ফলে অনলাইন গণমাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ক্ষেত্রবিশেষে বাধাগ্রস্ত হতে পারে৷
তাই টিআইবি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট খাতে যোগ্যতাসম্পন্ন, গ্রহণযোগ্য ও দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে৷ পাশাপাশি ভয়ভীতি ও পক্ষপাতহীনভাবে যেন সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাও নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷
এ বিষয়ে টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সর্বজন ও সংবিধান স্বীকৃত মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি৷ সেটা অনলাইন নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷ এই নীতিমালা করার সময় নাগরিকদের মতামত নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সেই মতামতের প্রতিফলন নীতিমালায় নাই৷''
তিনি বলেনন, ‘‘অনলাইন গণমাধ্যম কী, তা নীতিমালায় স্পষ্ট নয়৷ যার কারণে বাংলাদেশের যে কোনো অনলাইনকেও এই নীতিমালার আওতায় আনা যাবে, যা কেনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটও এই নীতিমালার আওতায় এসে যাবে৷ এছাড়া অনেক সংজ্ঞা এবং শব্দও পরিষ্কার করা নাই৷ এই অস্বচ্ছতাই অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেয়৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘অনলাইন গণমাধ্যমকে কমিশনের কাছ থেকে তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য৷ এটা কণ্ঠরোধের একটি কৌশল৷ সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে৷ এটা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়ার কোনো বিষয় নয়৷ চাপিয়ে দিলে কোনো ভালো ফলও আসবে না৷ এটা বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণভাবে সংবাদমাধ্যমের জন্য গাইড লাইন ও আচরণ বিধি থাকে, যা তারা অনুরণন করেন৷ এর বাইরে কোনো বাধ্যবাধকতার মধ্যে যায় না৷''
ইফতেখারুজ্জামানের কথায়, ‘‘এখনো সময় আছে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ কার্যকর না করে, বরং অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা করা, যাতে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়৷''