1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনলাইন-অফলাইনের যুগলবন্দি ঈদ

Fatema Abedin, Intern, DW Bangla section.
ফাতেমা আবেদীন
৬ মে ২০২২

করোনা মহামারির ভয়াবহতায় গত দুই বছর ঈদের আনন্দ শূন্যে নেমে এসেছিল৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল ঈদ-আনন্দ৷ সে সময়কার রাজধানীসহ বড় বড় শহরের ঈদ স্বীকৃতি পেয়েছিল আপাদমস্তক অনলাইন ঈদের৷

https://p.dw.com/p/4AvYO
Eid Festival in Dhaka, Bangladesh 2022
ছবি: Mortuza Rashed/DW

অনলাইনে কেনাকাটা, মোবাইলের ৬ ইঞ্চি স্ক্রিনে যোগাযোগ সেরে নেওয়া, মোবাইল ওয়ালেটে ঈদের সালামি দেওয়ার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল৷ তবে জনসাধারণের মনে  চাঁদরাতের আনন্দ বা ঈদের জামায়াতের কোলাকুলি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেলামি তোলার সংস্কৃতির জন্য মন উথালপাথাল ছিল সবসময়৷ ঈদের জামাতের বদলে নিত্য জানাজায় অংশ নিতে হয়েছে মানুষকে, বিশেষ করে দুই ঈদেই কোভিডে মৃত্যুর হার ছিল বেশি৷ বেশ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ছিল ’২০ ও ’২১ এর ঈদ৷

২০২২ সালে ঈদের ঐতিহ্য ফেরত এসেছে, তবে অনলাইন-অফলাইনের এক বিশেষ সম্মিলন ঘটেছে এ ঈদে৷ কোভিডের বছরগুলোতে সবকিছু যেমন অনলাইনকেন্দ্রিক ছিল, এবার তার কিছুটা বদল ঘটেছে৷ তবে অনলাইন রয়ে গেছে অনেক কিছুই৷

২০২১ সালের শেষ দিকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, করোনাকালে মোবাইল কলের চেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ৷ ২০১৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাংলাদেশি ছিলেন ৩ কোটি, ৩ বছরে সেটি বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি৷ এই মুহূর্তে ১০ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী৷ ২০২২ সালে নিশ্চিতভাবে সেটি আরো বেড়েছে, এখনো সে বিষয়ক কোনো প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি৷

বিটিআরসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১-এর জুলাই মাসে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার৷ অথচ জুন মাসের শেষে তা ছিল ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার৷ এই হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশে এক মাসে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ২৯ লাখ ৩৫ হাজার৷ তবে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার৷ অবশিষ্ট ৮৫ লাখ ৭১ হাজার হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী৷

এদিকে করোনা মহামারির সময় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক লেনদেন, বিভিন্ন ধরনের নতুন ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির হার বৃদ্ধির কারণে  ২০৩০ সালের মধ্যে মোবাইল ডাটার গ্রাহক দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হবে বলে দাবি করে ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট৷ ২০২১ সালের শেষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি৷

সেই সময় প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি স্মার্টফোনে মাসিক মোবাইল ডাটার ব্যবহার গড়ে ২০২০ সালের ২ গিগাবাইট (জিবি) থেকে বেড়ে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩ দশমিক ৬ জিবি হয়েছে৷

অনলাইনে কন্টেন্টভিত্তিক আয় যেমন বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স৷ ফলে ঈদের বাজারে অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রভাব রেখেছে৷ বিশেষত, ঢাকাসহ সারাদেশে ই-কমার্সের বাণিজ্যিক লেনদেন চোখে পড়ার মতো৷ সবচেয়ে প্রত্যাশার বিষয় হচ্ছে ই-কমার্সের ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা নারী৷

Bangladesch | Eid
ঈদের বাজারে অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রভাব রেখেছেছবি: Privat

এ প্রসঙ্গে ইকমার্সভিত্তিক সংগঠন ই- কমার্স অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘‘ঈদকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ রোজার আগে যেখানে দৈনিক আড়াই লাখ ডেলিভারি হতো, সেটা এই মুহূর্তে সাড়ে তিন লাখের বেশি হচ্ছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বিগত বছরসমূহে আমরা লক্ষ্য করেছি অনলাইন কেনাকাটা ঈদের সময়ে বৃদ্ধি পায়৷ রমজান মাসের লেনদেন তার আগের মাসের লেনদেনে থেকে ৫০ শতাংশের বেশি থাকে৷ বর্তমানে দেশে প্রতিদিন সারাদেশে ডেলিভারির পরিমাণ ৩ লাখের মতো৷ ঈদকে কেন্দ্র করে এই ডেলিভারির সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে চার লাখে হয়েছে৷ প্রতিটি ডেলিভারির বাস্কেটভ্যালু ২১৫০ টাকা থেকে ২২শ' টাকা ছিল৷ ঈদে বাস্কেটভ্যালু গড়ে ২৫শ টাকা হয়েছে৷ সাধারণত পোশাকের ক্ষেত্রে বাস্কেটভ্যালু আরো কম হলেও গেজেটের কারণে এর গড় ভ্যালু বেড়ে যায়৷’’

তিনি জানান, এই বাণিজ্যিক লেনদেনকারীদের ৭০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা৷ গত কয়েক বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বাজারে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের ই-কমার্স৷

অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই  জনপ্রিয় পোশাক ব্র্যান্ড শরদিন্দুর কর্নধার হাবিবা আক্তার সুরভী বলেন, ‘‘আমাদের অনলাইন সেলটা বেশি ছিল বরাবরের মতোই৷ আমাদের মোট সেলের ৬০ শতাংশ অনলাইনে ৪০ শতাংশ অফলাইনে হয়েছে৷’’

২০১৭ সালে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু করে সুরভীর প্রতিষ্ঠান ‘শরদিন্দু’৷ ২০১৮ সালে হ্যাপি আর্কেডে প্রথম অফলাইন আউটলেটের যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি৷ গত ৪ বছরে সারা দেশে ৬টি আউটলেট চলছে৷

সুরভী বলেন, ‘‘যেহেতু রেডিমেড ড্রেসের প্রতিষ্ঠান নয় শরদিন্দু, তাই চাঁদরাতে তেমন কোনো ভিড় ছিল না আউটলেটগুলোতে৷ বিশ রোজার পর সব হিট ও বেস্টসেলার ড্রেস প্রায় স্টক আউট ছিল৷ আমাদের আউটলেটগুলোতে ২৭ রোজা পর্যন্ত ভিড় ছিল৷’’

এফ-কমার্সভিত্তিক ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান ‘মন ভরে খান’-এর কর্ণধার রিফাত ফাতিমা অন্তি মে দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘শ্রমিক দিবসে রান্না করলাম ১০০ পিস রোস্ট, ৬ কেজি গরুর মাংস, ৫কেজি খাসী, ৫ কেজি মালাই জর্দা, ৩৫ জনের পোলাও ,২৫ টা চপ, জীবন হয় সুন্দর, ঈদ মুবারক!’’

অন্তি জানান, চাঁদ রাতে পাঠাও-উবার পার্সেল ও নিজস্ব ডেলিভারি ব্যবস্থায় প্রায় এক থেকে দেড়শ জনের খাবার ডেলিভারি দিয়েছেন৷ রাত ১১টা পর্যন্ত চলেছে তার ডেলিভারি৷ বেশিরভাগ ক্রেতাই ঈদের রান্না আগের দিন সংগ্রহ করেছেন ক্লাউড কিচেনগুলো থেকে৷ অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের অর্ডার অনেক বেশি ছিল৷

Bangladesch | Eid festival in Dhaka
ঈদের দিন অনলাইনভিত্তিক ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যস্ত ছিল ছবি: Fatema Abedin

বেশ কয়েকটি অনলাইনভিত্তিক ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান ঈদের দিন হাসপাতাল, অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশন ও বাসাবাড়িতে খাবার সরবরাহের কাজ অব্যাহত রেখেছিল৷ এর সংখ্যাও শতাধিক৷

ঈদে শুধু জামা-কাপড় বা খাবার বিক্রি হয়নি৷ অনলাইনে খেলনা বিক্রির ব্যবসাও ছিল জমজমাট৷ সাধারণত পোশাক কিনতে গিয়ে বাচ্চাদের বায়না সামলাতে খেলনা কিনে দেওয়ার চল ছিল ঈদে৷ তবে সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ অনলাইন খেলনা বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘কুল টয়েস'-এর প্রতিষ্ঠাতা আয়েশা সিকদার জানালেন, এ বছর ঈদে তিন শতাধিক পরিবার নানা ধরনের খেলনা কিনেছে বাচ্চাদের ঈদ উপহার দিতে৷ এর মধ্যে বাচ্চাদের শিক্ষামূলক খেলনা, ব্রেন ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত খেলনা ও মজাদার খেলনার বিক্রি বেশি ছিল৷ চাঁদরাত পর্যন্ত ডেলিভারি দেন তিনি৷

ই-কমার্সভিত্তিক অনলাইন সংগঠন হার-ই-ট্রেড-এর প্রেসিডেন্ট ওয়ারেসা খানম প্রীতি জানান, তার প্ল্যাটফর্মে প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তা আছেন, যার প্রায় শতভাগই নারী৷ হাতে গোনা কয়েকজন পুরুষ বিক্রেতা রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে পোশাক, ব্যাগ, প্রসাধন, গৃহস্থালী সামগ্রীসহ নানা পণ্যের উদ্যোক্তা আছেন৷ তাদের প্রায় সবাই চাঁদরাত পর্যন্ত ডেলিভারি দিয়েছেন৷ এ বছর প্রায় সবাই গত দুই বছরের তুলনায়  ৩৫ শতাংশ বেশি ব্যবসা করেছেন৷

ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান মেঘস্বর কুরিয়ারের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ জানালেন ঢাকা শহরে ডেলিভারির চিত্র৷ ২৪ রোজার আগেই এসএমএস এবং মেইলের মাধ্যমে তার গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন- ২৭ রোজা পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান ‘পিক’ করবে এবং ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পৌঁছানোর কাজ অব্যাহত রাখবে৷ তবে অনলাইন ব্যবসায়ীদের থেকে লাস্ট মোমেন্ট ডেলিভারির চাপও সামলাতে হয়েছে প্রতি বছরের মতো৷ তিনি জানান, ঈদের আগের সপ্তাহে দিনে ৪৫০ থেকে ৫০০ ডেলিভারি দিয়েছেন তার কর্মীবাহিনী৷ তিনি নিশ্চিত করেন তার বিক্রেতারা সবাই অনলাইন ব্যবসায়ী৷

অনলাইনে যে শুধু পোশাক, জামা, জুতা, ব্যাগ বা খাবার বিক্রি হয়েছে, তা নয়৷ টাকার লেনদেনও হয়েছে ব্যাপক৷ পুরো রোজায় মোবাইল ওয়ালেটের লেনদেন ছিল চোখে পড়ার মতো৷ এ প্রসঙ্গে নগদের হেড অব কমিউনিকেশন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাহকের ঈদ কেনাকাটায় প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি লেনদেন প্রক্রিয়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তুলে আনতে গত তিন বছর থেকেই কাজ করছে নগদ৷ তবে এবার ঈদের আগে নগদ-এর অনেকগুলো আকর্ষণীয় অফার দিয়েছিল৷ ফলশ্রুতিতে নগদ-এর মাধ্যমে ব্যপক সাড়া ফেলেছে এবং ঈদের আগে দৈনিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে গেছে৷

তবে এবার ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় চমক হয়ে এসেছে নগদ থেকে মোবাইল ফোনের রিচার্জের অংক৷ এমনিতেই নগদ-এর মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জসহ অনলাইনভিত্তিক অন্যান্য সেবা গ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ স্বাভাবিক কারণেই ঈদের সময় সেটি আরো বাড়ে৷ তবে নানা কারণে এবার ঈদের দিনে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মোবাইল রিচার্জের পরিমাণ বহুগুণে বেশি হয়েছে৷

এদিকে বিশেষ করে মোবাইল ওয়ালেটে সালামি দেওয়ার চলটা বেশ জমেছে এবারের ঈদে৷ ‘ঈদের চাঁদ আকাশে-সালামি দিন বিকাশে' স্লোগানটি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছে গত দু বছরে৷ এবারেও এই সালামির চল ছিল৷ বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় ঈদ সালামি শুভেচ্ছা কার্ড সহ সালামি পাঠানোর হার প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে ৷ ঈদের এই এক সপ্তাহে প্রায় আট লাখ গ্রাহক বিকাশের ঈদ সালামি ফিচার ব্যবহার করে প্রিয়জনকে ডিজিটাল অর্থ ও পছন্দমতো বার্তা দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷’’

চাঁদরাতের ঢাকা বরাবরের মতোই ছিল নির্ঘুম৷ রাজধানীর অলিতেগলিতে ছিল ঈদের দিনের প্রস্তুতি৷ বিশেষ করে পাড়া-মহল্লার টেইলার দোকানগুলোতে শেষ মুহূর্তের লেনা-দেনা চলছিল৷ রাত ১০টায় কাঁঠালবাগান বাজারের ইয়াসিন টেইলার্সের হাফিজ শেষ কাপড় ভাঁজ করছিলেন৷ তিনি জানালেন, এবার ৩০ রোজা পরায় আগেই শেষ করতে পেরেছেন৷ ২৯ রোজা হলে নামাজের আগ পর্যন্ত ডেলিভারি দিতে হতো৷  আট শতাধিক কাপড় সেলাই করেছেন এবার৷ এর মধ্যে স্যালোয়ার-কামিজ চারশ'র বেশি৷ বাচ্চাদের কাপড় ছিল ৫০-৬০টা৷ তিনি বাচ্চাদের কাপড় সেলাই করতে চান না বেশি, তাই কম ছিল৷ বাকি সব ছিল ব্লাউজ পেটিকোট, ম্যাক্সি৷ সব কর্মীর ছুটি দিয়ে দিলেন তখুনি৷ চাঁদ রাতের কেনাকাটা সারতে তিনি নিজেও ছুটছেন নিউ মার্কেটে, কাজের চাপে কোনো কেনাকাটাই তার হয়নি৷

Bangladesch | Eid festival in Dhaka
ছবি: Fatema Abedin

উপচে পড়া ভিড় ছিল পাড়ার সেলুন ও বিউটি পার্লারগুলোতে৷ রাত দুটো -তিনটে পর্যন্ত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভিড় দেখা গেছে৷ ঢাকায় গত কয়েক বছরে এমনই হচ্ছে বলে জানালেন বিউটি স্যালন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভের  প্রধান নির্বাহী শারমিন কচি৷ চাঁদরাতে একটা বিশাল অংশ আসেন শেষবেলার রূপচর্চা করতে৷ একটি বিশাল অংশ আসেন মেহেদি দিতে৷

রেড বিউটি স্যালনের প্রধান আফরোজা পারভীন চাঁদরাতে তার পার্লার থেকেই কথা বললেন৷ রাত তখন ১১টা৷ চাঁদরাতে তিনি আড়াইটা পর্যন্ত ছিলেন পার্লারে৷ প্রায় আড়াইশ গ্রাহককে তার পার্লার সেবা দিয়েছে ঈদের আগেরদিন৷ এর মধ্যে শতাধিক এসেছিলেন মেহেদি দিতে৷

ফাতেমা আবেদীন
ফাতেমা আবেদীনছবি: privat

আফরোজা পারভীন বলেন, গত দুই বছর মানুষের ঈদের আনন্দ ছিল না, তাই রীতিমতো বিয়ের মেহেদি হাতে পরেছেন প্রতিটি গ্রাহক৷ এরকম একজনকে মেহেদি দিতে প্রায় ১ ঘণ্টা লাগে৷ তার কর্মী বাহিনীর শুধু মেহেদি দিতেই ১০০ কর্মঘণ্টা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি৷

রাতের কাঁচাবাজারও ছিল জমজমাট৷ বিশেষ করে ঈদের দিন চটপটি ফুচকা বিক্রেতাদের ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার উপচে পড়া ভিড়৷ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের আলআমিন একটি ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ ঈদ উপলক্ষে তিনদিনের ছুটি পেয়েছেন৷ এই তিনদিনে তিনি ফুচকার দোকান দেবেন৷ তাই সব রসদ জোগাড় করলেন৷

শেষ মুহূর্তে ফুল বিক্রেতারাও ঝাঁপ বন্ধ করেছেন মাঝরাতে৷ সর্বশেষ উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোতে৷ রাত দুটোয় সেই রাস্তায় রীতিমতো জ্যাম লেগেছিল৷ চাঁদরাতের শপিং বলে কথা!

বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এসেছেন তাদের ঝাঁপ বন্ধ করে নিজেদের শপিং করতে৷ আর এসময় রেডিমেড পোশাক আর জুতা ছাড়া কিছু কেনারও থাকে না৷

তবে ঈদের আগের রাতে অলিতে-গলিতে যেমন আড্ডা, তেমন রাজধানীর বাড়িগুলোতে আলো নেভে না৷ কোনো কোনো বাড়ি থেকে ভেসে আসে চিরচেনা সেই গানের সুর- ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’৷ একদিনের এই সর্ববৃহৎ উৎসব উদযাপনের জন্যই এত আয়োজন৷

Fatema Abedin, Intern, DW Bangla section.
ফাতেমা আবেদীন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক