অধ্যাপক ইউনূস ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতর্ক নিয়ে জার্মান সংবাদ মাধ্যমের মন্তব্য
২৩ জানুয়ারি ২০১১‘নয়ে স্যুরশার সাইটুং' লিখেছে, এই বিতর্কের ফলে রাতারাতি ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাটাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ শুধু অধ্যাপক ইউনূসই নয়, বিভিন্ন দেশে যেসব ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ দিচ্ছে, তাদের কার্যকলাপও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছে৷ ভারতে ঋণের ভারে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যার বেড়ে চলা ঘটনার প্রেক্ষাপটে শেয়ার বাজারে এসকেএস মাইক্রোফাইনান্স সংস্থার মুনাফা-কেন্দ্রিক কার্যকলাপের নিন্দা করা হচ্ছে৷ দরিদ্র মানুষের জীবিকার ভিত্তি হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণের জয়গান গাওয়া হয়েছে এতকাল৷ এক বিশেষজ্ঞের মতে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এই কাঠামো অত্যন্ত সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু যেসব সংস্থা এর অপব্যবহার করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ ভারতের গুজরাট ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে কিছু ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের ফলে দরিদ্র মানুষের বিশেষ উপকার হয়েছে৷ সমস্যা দেখা যায়, যখন ক্ষুদ্র ঋণের বাজারে জোরালো প্রতিযোগিতার ফলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ছাড়াই গ্রাহককে তড়িঘড়ি করে ঋণ দেওয়া হয়৷ তাছাড়া ব্যাংকের মুনাফা যদি আবার ঋণের আকারে দরিদ্রদের কল্যাণে না লাগিয়ে লগ্নীকারীদের কাছে যায়, তার ফলেও গোটা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ে৷
দৈনিক ‘স্যুডডয়চে সাইটুং' ক্ষুদ্র ঋণের আবিষ্কারক হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস'এর বর্তমান সংকটের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করছে৷ এই ঘটনার ফলে তাঁর বিশাল অবদানের উপর কালো ছায়া পড়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করছে বলে মনে করছে ঐ সংবাদপত্র৷ বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম ও সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে পড়ে৷ সেদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূসের মন্তব্য মোটেই বিস্ময়কর নয়৷ তার উপর ‘নাগরিক শক্তি' নামের দল গঠন করায় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই তাঁকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আজ তাঁকে শত্রু হিসেবে দেখেন৷ তাঁর সরকারও নানা ভাবে অধ্যাপক ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে৷ ক্ষুদ্র ঋণের কাঠামো নিয়ে সব দেশেই মৌলিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ হয়তো বর্তমান এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এই কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্ভব হবে – মন্তব্য করেছে ‘স্যুডডয়চে সাইটুং'৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়