1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্ত হত্যা বলতে পররাষ্টমন্ত্রীর সংশয়!

৭ জানুয়ারি ২০২১

১০ বছর আগে সীমান্তে নিহত কিশোরী ফেলানীর পরিবার এখনো বিচার পায়নি৷ বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷ চোরাচালানও কমেনি৷ বাংলাদেশের পররাষ্টমন্ত্রী এসবের জন্য শুধু কোনো এক পক্ষকে দায়ী করতে নারাজ৷

https://p.dw.com/p/3ndpm
Bangladesch Wahlen 04. Januar 2014 Grenze zu Indien
ছবি: DIPTENDU DUTTA/AFP/Getty Images

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এখানো আশায় বুক বেধে আছেন যে, মেয়ের হত্যার বিচার হবে৷ কিন্তু সে আশা কি পূরণ হবে?

পেটের দায়ে ভারতে গিয়েছিলেন মেয়েকে নিয়ে৷ দেশে এনে মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তার সেই স্বপ্ন লাশ হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতারে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি৷ ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের ওপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে তাকে ৷

কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কোচবিহারে বিএসএফ-এর আদালত এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে ৷ এরপর ফেলানীর বাবা ন্যায় বিচারের জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যান৷ কিন্তু এখনো তার আবেদনের শুনানি শুরু হয়নি বলে জানান তিনি৷ বৃহস্পতিবার টেলিফোনে তার সাথে কথা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে সবাই যোগাযোগ করতো, করোনা শুরুর পর কেউ আর যোগাযোগও করছে না৷ ভারত সরকার পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে শুনেছিলাম, তা-ও পাইনি৷ তবে (বাংলাদেশ) সরকারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা পেয়েছি৷’’

নুরুল ইসলাম

ফেলানী হত্যার পর সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছে ভারত৷  সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো৷ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে ফুল আর মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিএসএফ সদস্যদের৷ বিএসএফ ওই দিন ‘উপহার' দিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ৷

মূলত চোরাচলানের কথা বলেই সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হয়৷ কিন্তু এর পিছনে বিএসএফ-এর ঘুস বাণিজ্যেরও ভূমিকা রয়েছে৷ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও একই  খবর দিয়েছে৷

আর ভারতীয় গরু বা পণ্য তো সব সীমান্তে থাকে না৷ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এই গরু বা পণ্য আনা হয় সীমান্তে৷ গরু. মাদক, অস্ত্র ইত্যাদি সীমান্তে আসে কিভাবে?

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সীমান্তে মোট ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ এর মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং ছয় জনকে হত্যা করা হয় নির্যাতন চালিয়ে৷ অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশিকে৷ ওই সময়ে ২৬ জন বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে গুরুতর আহত হন৷ অপহৃতদের মধ্যে মাত্র পাঁচ জনকে ফেরত দেয়া হয়েছে৷ বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি৷

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে সীমান্তে বিএসএফ ৩৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে৷ তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে গুলি করে এবং পাঁচ জনকে নির্যাতনে হত্যা করা হয়৷ ২০১৮ সালে সীমান্তে ১৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়৷ এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বাড়ছে৷ বাড়ছে মারণাস্ত্রের ব্যবহার৷

‘যারা মারা যায় তারা বর্ডারে কিন্তু মারা যায় না’’

ভারতের মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) প্রধান কীরিটি রায় সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে বলেছেন,  চোরাচালানে যখন ঘুসের টাকা বিএসএফ পায় না, তখনই হত্যা করে৷ কেন্দ্রীয় সরকার যতই মুখে বলুক তারা আসলে কোনো ব্যবস্থা নেয় না৷

বৃহস্পতিবার কথা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও৷ তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ভারত কেউই চায় না সীমান্ত হত্যা হোক৷ শুধু ভারত বা বাংলাদেশকে দোষ দিলে হবে না৷ এখানে কিছু ব্যবসায়ী আছে তারা ড্রাগ ব্যবসা করে, ফেনসিডিল আনে, গরু চোরাচালান করে৷ এরা দুই দিকেই আছে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বার বার অঙ্গীকার করেছে৷ বলেছে, হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে, একজনও মরবে না৷ লেথাল উইপন ব্যবহার করবে না৷ তবুও একটা দুইটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়৷
তার মনে করেন, সীমান্ত থেকে অনেক লোক আসা যাওয়া করে৷ তাদের মধ্যে দুষ্ট লোক আছে৷ তারা অস্ত্র বহন করে৷ এটা একটা সমস্যা৷’’ তার মতে, ‘‘প্রায় ক্ষেত্রে যারা মারা যায়, তারা কিন্তু বর্ডারে মরে না৷ ভারতের চার-পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে মারা যায়৷ সেটাকে বর্ডার কিলিং কতটুকু বলা যায় আমি জানি না৷’’

বিজিবি গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে ৭৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে৷ মাদকসহ নানাকিছু চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ হাজার ৫৯৪ জনকে আটক করা হয়৷ চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ৩৫ টি পিস্তল, ৯০ টি বন্দুক ও ১০ হাজার বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান