1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘাতক স্থলমাইন

ওয়াসলাত হজরত-নাজিমি/এসি৪ এপ্রিল ২০১৩

আফগানিস্তানে বিগত তিন দশক ধরে যুদ্ধ চলেছে৷ দেশের প্রায় সব প্রদেশের মাটিই স্থলমাইনে ভরে আছে৷ তার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা৷

https://p.dw.com/p/189QS
ছবি: picture-alliance/landov

১৩ বছর বয়সের কিশোর ফিরোজ আলি আলিজাদা তার কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে স্কুলে যাবার পথে একটি মাঠ দিয়ে শর্টকাট নিচ্ছিল৷ ফিরোজ অজান্তে একটি স্থলমাইনের উপর পা দেয় এবং গুরুতরভাবে আহত হয়৷ হাসপাতালে দেখা যায়, তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য তার দু'টি পা কেটে বাদ দিতে হবে৷ কিন্তু ডাক্তাররা তা করতে অনিচ্ছুক৷ শেষমেষ ফিরোজের পরিজনের কাছ থেকে নগদ পাবার পর ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করেন৷ ফিরোজ বাঁচে, তবে সারাজীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে৷

আজ ফিরোজ জেনেভার স্থলমাইন নিষিদ্ধকরণ আন্তর্জাতিক প্রচার অভিযান বা আইসিবিএল-এর ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন৷ এই নেটওয়ার্কে সারা বিশ্বের বারোশ'টির বেশি এনজিও সংঘবদ্ধ: এই সব এনজিওর লক্ষ্য হলো, বিশ্বব্যাপী স্থলমাইনের ব্যবহার ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করা৷

Afghanistan Tag der Aufklärung über Minengefahr
মাইনবোমায় হতাহতদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিশু ও কিশোরছবি: F.Mashuof

ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে ফিরোজ বলেন, ‘‘আমার কপাল ভালো ছিল৷ দু'টি পা এবং শরীরের প্রায় সব রক্ত খোয়ানো সত্ত্বেও আমি যে প্রাণে বেঁচেছি, সেটাই একটা আশ্চর্য৷ প্রতিমাসে গড়ে ৩০ থেকে ৬০ জন আফগান স্থলমাইন বোমা ফেটে নিহত কিংবা আহত হয়৷ নব্বইয়ের দশকের তুলনায় এই সংখ্যা কমেছে বটে, কিন্তু এখনও তা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি৷’’

শিশুরাই বিপন্ন

‘‘বিশ্বের কোনো দেশে আফগানিস্তানের মতো এত মাইনবোমা পোঁতা নেই,'' বলেন এভা মারিয়া ফিশার, যিনি হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি দাতব্য সমিতির মুখপাত্র৷ সংগঠনটি সারা বিশ্বে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্য সক্রিয়৷ তাঁর হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে স্থলমাইন পোঁতা মোট ৫,০০০ এলাকা আছে৷ সেখানে যে সব মানুষেরা থাকেন, তাদের সবসময়েই মাইন বিস্ফোরণে নিহত কিংবা আহত হবার আশঙ্কা থাকে৷ বিশেষ করে শিশুদের৷

মাইন অ্যাকশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার অফ আফগানিস্তান – http//www.mineaction.org/org.asp?o=17 – এমএসিসিএ – জাতিসংঘের একটি প্রতিষ্ঠান৷ তাদের বিবৃতি অনুযায়ী আফগানিস্তানে মাইনবোমায় হতাহতদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হল শিশু ও কিশোর-কিশোরী৷ চার লাখের বেশি মানুষ মাইন বোমা বিস্ফোরণে এমনই গুরুতরভাবে আহত হয়েছে যে তারা সারাজীবন প্রতিবন্ধী হয়ে থাকবে৷

Afghanistan Kriegsopfer Landmine in Kabul
স্থলমাইনের শিকার নারীছবি: AP

আফগানিস্তানের শ্রম, সমাজকল্যাণ, শহিদ ও প্রতিবন্ধী দপ্তরের মোহাম্মদ আল-দিন কানি অনুরূপ পরিসংখ্যান দিয়েছেন: ‘‘প্রদেশে প্রদেশে পার্থক্য থাকে৷ কয়েকটি প্রদেশে প্রতিবন্ধীদের ৭০ শতাংশ মাইন বিস্ফোরণে অঙ্গ হারিয়েছে৷ অন্যত্র হয়ত তার কম৷ কিন্তু সব ক'টি প্রদেশ মিলিয়ে বলা চলে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বস্তুত মাইনবোমার শিকার৷''

বোমার পর বৈষম্য

বিভিন্ন পুনর্বাসন কর্মসূচি সত্ত্বেও মাইনবোমায় আহত মানুষদের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়৷ তারা মাসে পাঁচ থেকে আট ইউরো পরিমাণ পেনশন পায়, যা অতি স্বল্প৷ প্রতিবন্ধীদের পক্ষে কাজ পাওয়াটা আরো দুরূহ৷ এর পরও থাকছে দৈনন্দিন জীবনে নানা বৈষম্যের অভিজ্ঞতা, ফিরোজ আলি আলিজাদা যার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত৷ বিভিন্ন শারীরিক বাধা-অসুবিধাই শুধু নয়, সেই সঙ্গে দারিদ্র্য৷ কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো, সমাজের ‘সুস্থ' মানুষদের প্রতিবন্ধীদের প্রতি মনোভাব ও আচরণ৷ ফিরোজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবেদন করেন, তখন সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় শুধু এই বলে যে, তিনি প্রতিবন্ধী৷

সেই প্রত্যাখ্যানই ফিরোজকে প্রতিবন্ধীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার এবং বিশ্বব্যাপী স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার জন্য অভিযান চালানোর প্রেরণা যোগায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য