অক্টোপাসের চাহিদা মেটাতে মেক্সিকোয় বাণিজ্যিক চাষ
১৫ এপ্রিল ২০২২মেক্সিকোর প্রজননকেন্দ্রে ডিম ফেটে শিগগির মায়া প্রজাতির অক্টোপাসের ছানা বেরিয়ে আসবে৷ ভালো করে লক্ষ্য করলে ক্ষুদ্র কালো বিন্দু চোখে পড়বে৷ সেগুলি আসলে শাবকের ক্ষুদ্র চোখ৷ আরও নতুন ডিমও আসতে চলেছে৷ উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কার্লোস রোসাস ভাস্কেস জানালেন, ‘‘আমাদের এখানে ৩২টি ট্যাংক রয়েছে৷ প্রত্যেকটিতে একটি করে সন্তানসম্ভবা মা থাকে৷ ডিম পাড়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি৷’’
গবেষকরা সমুদ্র থেকে সন্তানসম্ভবা মা অক্টোপাস ধরে আনেন৷ সেগুলির বয়স সবে এক৷ ডিম পাড়ার পরেই মাদি অক্টোপাস মরে যায়৷ প্রাকৃতিক পরিবেশে অথবা প্রজনন কেন্দ্রে ক্ষুধার তাড়নায় এমন দশা হয়৷ তবে জীবনের শেষ পর্যায়ে হলেও অক্টোপাস বন্দি রাখার বিষয়টি বেশ বিতর্কিত৷
এই প্রাণী অত্যন্ত বুদ্ধিমান হওয়ায় সমালোচকরা বন্দিদশার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ কার্লোস রোসার মত অবশ্য ভিন্ন৷ তাঁর মতে, ‘‘চলচ্চিত্র ও অন্যান্য কাহিনির সুবাদে আমরা অক্টোপাসকে মানুষের মতো করে দেখি৷ সেটা একটা সমস্যা বটে৷’’
মেক্সিকোর দক্ষিণে অক্টোপাসের বিষয়ে বাস্তবসম্মত মনোভাব দেখা যায়৷ কারণ গ্রামের অনেক মানুষের কাছে এই প্রাণী একই সঙ্গে উপার্জনের উৎস ও খাদ্য হিসেবে মূল্যবান৷ জেলে পরিবারের সদস্য সিলভিয়া কক বলেন, ‘‘এই ইয়ুকাটান অঞ্চলে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় অক্টোপাস পাওয়া যায়৷’’
সিলভিয়া আজ অক্টোপাস ভাজা পরিবেশন করছেন৷ সঙ্গে মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী পদ এস্কাবেচেও রয়েছে৷ অন্যান্য অঞ্চলে সুশির মধ্যেও অক্টোপাস পরিবেশন করা হয়৷ গোটা বিশ্বে বছরে প্রায় চার লাখ বিশ হাজার টন অক্টোপাস মানুষের পেটে যায়৷ এর চাহিদাও দ্রুত বেড়ে চলেছে৷
আন্টোনিও ও সিলভিয়া কক প্রতিদিন উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে আসেন এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অক্টোপাস প্রজননের কাজে সাহায্য করেন৷ গবেষকরা যখন নিজেদের কাজ ও তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত, তখন আন্টোনিও ও তাঁর স্ত্রী একটি সমবায় গঠন করেছেন৷ বাণিজ্যিক স্তরে অক্টোপাসের প্রজননের পরিসর আরও বাড়ানো তাঁদের লক্ষ্য৷ প্রথমদিকে অবশ্য গ্রামের জেলে পরিবারগুলি মোটেই তেমন উৎসাহ দেখান নি৷ সিলভিয়া বলেন, ‘‘তারা এটাকে পাগলামি ভেবেছিল৷ বলেছিল, তোমরা অযথা সময় নষ্ট করছো৷ তাদের মনে বিশ্বাস ছিল না৷’’
ইতোমধ্যে প্রায় দশটি জেলে পরিবার সমবায়ে শামিল হয়েছে৷ আর্থিক অনুদান কাজে লাগিয়ে তাঁরা সম্প্রতি নিজস্ব স্থাপনা গড়ে তুলতে পেরেছেন৷ ট্যাংকও প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ এবার শুধু কমপ্লেক্স চালু করার জন্য অর্থের প্রয়োজন৷ অক্টোপাস শিকারী হিসেবে আন্টোনিও কক বলেন, ‘‘আরও বড় বাজারের নাগাল পেতে আমরা আমাদের প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে চাই৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিক্রিই হলো উদ্দেশ্য৷ পারলে আগামীকালই আমি নিজের এই স্বপ্ন বাস্তব করতে চাই৷’’
এই প্রকল্প অনেক জেলে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে৷ মাত্রাতিরিক্ত শিকারের ধাক্কা সামলানোর দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রকল্পটি অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও আদর্শ হয়ে উঠতে পারে৷
কাটিয়া ড্যোনে/এসবি