৯৩ বছর বয়সির বিচার শুরু
২১ এপ্রিল ২০১৫দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আউশভিৎসে কাজ করেছেন অস্কার গ্র্যোনিং৷ সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি৷ ট্রেন থেকে ইহুদিরা নামলে তাঁদের কাপড়চোপড়, টাকা-পয়সা গুছিয়ে রেখে দেয়াই ছিল তাঁর কাজ৷ গ্র্যোনিংয়ের দাবি, তিনি শুধু সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন৷ কাউকে নিজে হত্যা করেননি বা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে সহায়তাও করেননি৷ এ কারণে তিনি এ দাবিও করছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে তিন লক্ষ লোকের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন৷
১৯৪৪ সালের ১৬ মে থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার হাঙ্গেরীয় ইহুদিকে ধরে আউশভিৎসে নিয়ে আসে নাৎসি বাহিনী৷ ট্রেনে করে ১৩৭ বারে আনা হয় তাদের৷ রেল স্টেশনের প্লাটফর্মেই কাজ করতেন অস্কার গ্র্যোনিং৷ তার বয়স তখন ২১৷ ইতিহাস বলছে, ওই সময় হাঙ্গেরি থেকে নিয়ে আসা সোয়া চার লাখ ইহুদির মধ্যে তিন লাখ জনকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ ওই তিন লাখ মানুষের সঙ্গে আসা টাকা-পয়সা, ঘড়ি, চশমা এবং অন্যান্য জিনিস গুনে-গুছিয়ে ঠিকভাবে বার্লিনে পাঠানোর কাজটা খুব দক্ষতার সঙ্গেই করেছিলেন গ্র্যোনিং৷
কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে গ্র্যোনিং ল্যুনবুর্গ নামের একটি জায়গায় নিরিবিলি জীবনযাপন শুরু করার কারণে তাঁর ‘যুদ্ধাপরাধ'-এর বিষয়টি দীর্ঘদিন অগোচরে থেকে যায়৷ তবে ২০০৫ সালে জার্মানির বেশ কিছু পত্রিকায় যুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকার কথা বেরিয়ে আসে৷ একাধিক প্রতিবেদনে তিনি স্বীকার করেন, যুদ্ধের সময় ইহুদিদের মেরে ফেলার দৃশ্য কাছ থেকে দেখেছেন, মৃত্যুপথযাত্রীদের আর্তনাদ তিনি শুনেছেন৷ তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তখন এ কথাও বলেছিলেন, ‘‘আমি কাউকে হত্যা করিনি৷ সেখানে আমি সামান্য একজন কর্মচারি ছিলাম৷ হত্যায় সহায়তাও করিনি আমি৷ সুতরাং আমি নির্দোষ৷''
একটা সময় পর্যন্ত জার্মানিতে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ না থাকলে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতো না৷ এ কারণে অস্কার গ্র্যোনিংয়ের বিরুদ্ধেও এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি৷ কিন্তু পরে আইন সংশোধন করা হয়৷ এরই ফলে অস্কার গ্র্যোনিং এখন বিচারের সম্মুখীন৷
আজ, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে তাঁর বিচার শুরু হয়েছে ল্যুনবুর্গের স্থানীয় আদালতে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার ৭০ বছর পরও গ্র্যোনিংয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আসছেন যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, ক্যানাডা এবং ইসরায়েল থেকে৷ ইভা পুসতাই এসেছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্কার গ্র্যোনিং যেখানে কাজ করেছেন সেখানেই হত্যা করা হয়েছে তাঁর মা আর বোনকে৷ গ্র্যোনিং ব্যাগ, টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে দিয়ে তাঁদের হত্যাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন- এ কথা ভাবলে এখনো তাঁর চোখ ভিজে যায়৷ ৯৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করতেও তাই ছুটে এসেছে ইভা৷