বাল্যবিবাহ
১০ জুলাই ২০১৩স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ১৮ বছর হওয়ার আগেই ৬৬ ভাগ শিশু বা কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায়৷ তারপর অনিরাপদ গর্ভধারণ করে তারা অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেন৷ জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ড. এ কে এম নূর-উন-নবী ডয়চে ভেলেকে বলেন, সামাজিক এবং আর্থিক কারণে এখনো বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না৷ এ কারণে জনসংখ্যার একটি অংশ জনশক্তি না হয়ে বোঝায় পরিণত হচ্ছে৷
বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগই ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি কিশোরী৷ তাদের মধ্যে ৬৬ ভাগের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়৷ তাদের মধ্যে আবার ৬৪.৩ ভাগ কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করেন৷ সেই হিসেবে দেশে প্রতি বছর ১ কোটি ৬০ লাখ কিশোরী সন্তানের জন্ম দেন৷ এই তথ্য খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক জানিয়েছেন, মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ এই কৈশোরে গর্ভধারণ৷
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী ডয়চে ভেলেকে জানান, দেশে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নারীদের বিয়ে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিন্তু এ আইনের কারণে বাস্তব অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ তিনি এর জন্য আর্থসামাজিক অবস্থা, অশিক্ষা এবং ধর্মীয় কুসংস্কারকে দায়ি করেন৷ ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, নারীরা এখনো বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ বিশেষ করে গ্রাম ও হাওর অঞ্চল এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে নারীরা এখনো ‘অবরুদ্ধ'৷ এছাড়া কোনো কোনো পরিবার মনে করে, মেয়েকে শিক্ষিত করে বিয়ে দিলে বর পাওয়া কঠিন৷ পাওয়া গেলেও বেশি যৌতুক দিতে হয়৷ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাংলাদেশে৷ আবার আইন প্রয়োগ করাও কঠিন হয়, কারণ, বাল্যবিবাহের ঘটনা সামাজিকভাবেই গোপন রাখা হয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তি এড়াতে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে বলা হয়৷
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, এই কিশোরীরা বিয়ের পর গর্ভধারণ করলে দু'ধরণের সমস্যা হয়৷ একদিকে গর্ভবতী কিশোরী মা অপুষ্টি এবং নানা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন৷ আর তিনি যে সন্তান জন্ম দেন সেও অপুষ্টির শিকার হয়৷ এর এক ধরণের ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে৷ দেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ জনসম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়৷ এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমলেও কিশোরী মায়েদের শতকরা ৫০ ভাগ মৃত সন্তানের জন্ম দেন৷ শুধু তাই নয়, কিশোরী মায়েরা নানা ধরণের শারীরিক জটিলতায় ভোগেন এবং তাঁদের অনেকে অকালে মারাও যান৷
তাঁরা দুজনই মনে করেন, বাল্যবিবাহ এবং কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ বন্ধ করতে আইনই যথেষ্ট নয়৷ এর জন্য শুধু নারী নয়, সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে৷ এর বাইরে নানা ধরণের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও গ্রহণ করতে হবে৷ মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় নেতা এবং বিয়ের কাজিদেরও এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা৷