প্রশ্নপত্র ফাঁস
২৮ এপ্রিল ২০১৪বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে অধ্যাপক জাফর ইকবালের লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার দু'দিন আগে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাঁকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর জানায়৷ প্রমাণ হিসেবে সে (পরীক্ষার্থী) হাতে লেখা একটি প্রশ্নপত্র তাঁর (জাফর ইকবাল) কাছে পাঠিয়ে দেয়৷ পরবর্তীতে ঐ পরীক্ষার্থী পরীক্ষার দিন পাওয়া মূল প্রশ্নপত্রটিও পাঠালে তিনি (জাফর ইকবাল) মিলিয়ে দেখেন যে, আসলেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে৷
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক জাফর ইকবাল লিখেছেন, ‘‘...এই দেশের তরুণ ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা সেটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি৷ আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই স্বপ্ন ধারণ করে লেখাপড়া করে৷ তারপর দেখা যায় এই দেশের সরকার একটা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা দিতে পারে না৷ আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই যে, আন্তরিকভাবে চাইলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়া সম্ভব৷''
ইশতিয়াক রউফ ফেসবুকে অধ্যাপক জাফর ইকবালের এই প্রতিক্রিয়াটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘এইভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকা অকল্পনীয় এবং অমার্জনীয়৷ দায়ভার কাঁধে নিয়ে মন্ত্রী-সচিব সবার পদত্যাগ করা উচিত৷'' তবে সুশান্ত দাস গুপ্ত মন্ত্রীর পদত্যাগ না চেয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তাঁর (শিক্ষামন্ত্রী) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
একই বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষক ও শিক্ষক ডটকম ওয়েবসাইটের উদ্যোক্তা রাগিব হাসান৷ ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘‘প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়া পরীক্ষা বোধহয় এখন অসম্ভবের কাছাকাছি৷ বেশিরভাগ পরীক্ষার আগেই দেখছি প্রশ্নপত্র দিয়ে নীলক্ষেতের মুড়িওয়ালা ঠোঙ্গা বানায় মুড়ি বিক্রি করে! অদ্ভুত!! মনে হচ্ছে, আমাদের অধ্যবসায়ের মূল্যায়ন মুড়ির ঠোঙ্গায় বন্দি!....একটি জাতিকে পঙ্গু করে দেয়ার বোধহয় সহজতম উপায় হচ্ছে তাঁর মেধার অবমূল্যায়ন করা৷'' এরপর প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে, প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
এদিকে, সামহয়্যার ইন ব্লগে ব্লগার বিশ্বাস লিখেছেন, ‘‘চারিদিকে তো প্রশ্ন ফাঁসের মেলা বসে গেছে! আসলে এই প্রশ্ন ফাঁসের কারণটা কি? কারণটা তেমন কিছুই না ,শুধু নম্বর বা গ্রেড৷ যে প্রশ্ন ফাঁস করে সে জানে যে, এ জিনিসটাই সব৷ আর যে কেনে সেও জানে যে, এটা ছাড়া পৃথিবীতে কিছু করাই সম্ভব না৷ আসলেই কি নম্বর বা গ্রেড ছাড়া পৃথিবীতে কিছু করা সম্ভব না?'' একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আশা করি উদাহরণ পড়ে সবাই বুজেছো মূল কথা৷ নম্বর না, শিক্ষা বলেও পৃথিবীতে কিছু আছে৷ মুখস্থ করে হুবহু খাতায় লিখে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেলেই শেখা পূর্ণ হয় না৷''
একই ব্লগে শামিম ফেরদৌস রাজিব এই বিষয়ে একটি রম্য রচনা লিখেছেন৷ তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘‘পরীক্ষার ন্যূনতম ২৪ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর গণতান্ত্রিক অধিকার৷'' রাজিব লিখেছেন, ‘‘তাই আসুন, প্রশ্ন যেহেতু ফাঁস হবেই হবে, ফাঁস হওয়া ঠেকানোর সাধ্য যেহেতু কারো নাই, সেহেতু ন্যূনতম ২৪ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁসের দাবি জানাই৷ ১২ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পেলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ঘুমে ডিস্টার্ব হয়৷ মানবিক কারণেই সময় একটু বাড়ানো প্রয়োজন৷''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ