২৩ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন
৮ নভেম্বর ২০১৮প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের এই তফসিল ঘোষণা করেন৷
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর৷
সিইসি তাঁর ভাষণে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচেনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ থাকলে তা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করতে বলেছেন৷
তিনি ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন৷ আর শহরাঞ্চলে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন৷ কোনো হয়রানিমূলক মামলা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ ইতোমধ্যে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে৷ কমিশনারগণ সংবিধানের আলোকে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করার শপথ নিয়েছেন এবং তাতে তাঁরা নিবিষ্ট রয়েছেন৷ আমাদের প্রস্ততি সম্পর্কে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছি৷’’
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের মালিকানার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়, নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি হয়৷ এমন নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য আবারো আহ্বান জানাই৷ তাদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য বা মতবিরোধ থেকে থাকলে রাজনৈতিকভাবে তা মীমাংসার অনুরোধ জানাই৷ প্রত্যেক দলকে একে অপরের প্রতি সহনশীল সম্মানজনক এবং রাজনীতিসুলভ আচরণ করার অনুরোধ জানাই৷ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে প্রার্থীর সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে অনিয়ম প্রতিহত হয় বলে আমি বিশ্বাস করি৷ প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনো প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই৷’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনি প্রচারণায় সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে৷ সকলের জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির অনুকূলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে৷’’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘ভোটার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্ট যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন বা মামলা মোকদ্দমার সম্মুখীন না হন, তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ থাকবে৷ দলমত নির্বিশেষে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষ সকলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন৷
সিইসি বলেন, ‘‘‘ইভিএম ব্যবহারে উৎসাহব্যাঞ্জক আগ্রহ দেখা গেছে৷ আমরা বিশ্বাস করি, ইভিএম ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগতমান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে৷ সে কারণে শহরগুলোর সংসদীয় নির্বাচনি এলাকা থেকে দ্বৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বেছে নেয়া অল্প কয়েকটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে৷’’
সমঝোতার সুযোগ আছে?
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করেছিল৷ কিন্তু তা না করে একমাস আগেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে৷ প্রায় এক মাস সময় হাতে রেখে এই তফসিল ঘোষণা কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রকিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সময়টি একটি সমঝোতার সুযোগ করে দিয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে৷নির্বাচন কমিশন তার কাজ করেছে৷ আবার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুযোগও রেখে দিয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘যাঁদের ভোট আছে, তাঁরা দ্রুত নির্বাচন চাইবেন৷ কারণ, একদম শেষ সীমায় পৌছে গেলে যে-কোনো ধরনের সংকট হতে পারে৷ তার দায়িত্ব কে নেবে?’’
আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন চাইলে আরো পরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারত৷ তারা সরকার এবং তাদের কাছের দলগুলোর চাপে এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে বলে আমার মনে হয়৷ সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এখনো চলছে৷ শেষ হলে তারপর তফসিল ঘোষণা করা যেতে পারতো৷ তবে আমি মনে করি, এখনো সময় আছে৷ সমঝোতা হলে তফসিল পেছানোর মতো সময় হাতে আছে৷’’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের কথা বলেছেন৷
তবে তফসিল ঘোষনার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল এবং বিএনপি’র প্রাধান্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে৷
বাংলাদেশে নির্বাচন:
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এখন ৩০০ আসন৷ এই তিনশ’ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়৷ দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়ী হয়৷ ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয়ী হয়৷ ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি জয়ী হয়৷
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি৷ সেই নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্জন করে৷ নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে সবগুলো আসনেই জয় পায়৷ তবে ওই বছরেরই (১৯৯৬) ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে৷
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে৷ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসম্বের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট৷ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো বর্জন করে৷ এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে৷
আর আগামী ২৩ ডিসেম্বরের নির্বাচন হবে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷