২০১৩ সালে জার্মানিতে যা হবে, হতে পারে
২ জানুয়ারি ২০১৩২০১৩ সালে জার্মান রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ঘটনা হতে পারে সংসদ নির্বাচন৷ এর মাধ্যমে জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগের ৫৯৮ জন সদস্য নির্বাচন করা হবে৷ বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে সেপ্টেম্বরের ১ থেকে অক্টোবরের ২৭ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হবে৷
তবে সাংসদ বেছে নেয়ার এই নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হবে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর কে হচ্ছেন, সেটা জানা৷ এই পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন বর্তমান চ্যান্সেলর খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন বা সিডিইউ দলের আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং প্রধান বিরোধী দল সামাজিক গণতন্ত্রী দল বা এসপিডি'র পেয়ার স্টাইনব্রুক, যিনি একসময় জার্মানির অর্থমন্ত্রী ছিলেন৷
এখনো পর্যন্ত জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, আঙ্গেলা ম্যার্কেলই তৃতীয়বারের মতো চ্যান্সেলর হতে পারেন৷ কেননা ইউরো সংকট মোকাবিলায় ম্যার্কেলের ভূমিকায় সন্তুষ্ট অনেকে৷ তবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যদি ম্যার্কেল তাঁর বর্তমান ভাবমূর্তিটা ধরে রাখতে না পারেন, সেক্ষেত্রে স্টাইনব্রুক চ্যান্সেলর হয়ে যেতে পারেন৷
তবে জোটের রাজনীতির হিসেব বলছে, জার্মানিতে ম্যার্কেলের দল সিডিইউ সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল৷ এবং তাদের সমর্থন ছাড়া নতুন সরকার গঠন সম্ভব হবে না৷ কেননা পরিবেশবাদী গ্রিন দলের সঙ্গে মিলে এসপিডি যদি কোনো জোট গঠন করে তাহলে সেটা যথেষ্ঠ জনসমর্থন পাবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা৷ এছাড়া গ্রিন আর এসপিডি জানিয়ে দিয়েছে যে তারা পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্টদের উত্তরসূরি বাম দলের সঙ্গেও জোট করবে না৷ তাই সব মিলিয়ে নতুন সরকারে ম্যার্কেলের সিডিইউ থাকছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত৷
এই পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সিডিইউ'র সঙ্গে এসপিডি'র জোটের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন৷ কেউ কেউ সিডিইউ'র সঙ্গে গ্রিন পার্টির জোটের কথা বলছেন৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নতুন সরকারে সিডিইউ'র উপস্থিতি থাকছেই৷
রাজনীতির মাঠ থেকে এবার নজর দিচ্ছি জার্মানির নতুন জ্বালানি নীতির দিকে৷ ২০২২ সালের মধ্যে জার্মানি আণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে চায়৷ তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগোচ্ছে জার্মানি৷ কিন্তু এটা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে৷ এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে চারজনের একটি পরিবারকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে আগের চেয়ে ১২৫ ইউরো বেশি খরচ করতে হবে৷ বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প ও নতুন করে সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে সরকার৷ আর সেই টাকাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে৷
এদিকে, অর্থনীতি নিয়ে কদিন আগে অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শোয়েবলে কিছুটা আশার বাণী শোনালেও নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেয়া বক্তব্যে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেছেন, ২০১২'র চেয়ে ২০১৩ সালটা অর্থনীতির জন্য কঠিনতর হবে৷
২০১৩ সালের শুরুতে বার্লিনে সফরে আসছে মিশরের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি৷ আন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছেন মুরসি৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া তাঁর কয়েকটি সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি পশ্চিমা বিশ্ব৷ জার্মানিও তার মধ্যে একটি৷ এই পরিস্থিতিতে মুরসির বার্লিন সফর অনুষ্ঠিত হবে৷
এদিকে সিরিয়ায় চলমানরত আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্ককে বাঁচাতে সিরিয়া-তুর্কি সীমান্তে দুটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করবে জার্মানি৷ এছাড়া সীমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য চারশো সেনাও পাঠাবে সেখানে৷ ফলে ২০১৩ সালে সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার সেনা দেশের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে৷
নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উগ্র-ডানপন্থী ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে জার্মানিকে৷
আর ২০১৩ সালে বিলিয়ন-ডলার মূল্যের যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন জার্মানরা, সেটি হচ্ছে বার্লিনের নতুন বিমানবন্দর কবে উদ্বোধন হবে৷ ইতিমধ্যে তিন তিনবার তার উদ্বোধনের তারিখ পেছানো হয়েছে৷ নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছরের ২৭শে অক্টোবর সেটি উদ্বোধনের কথা৷ দেখা যাক, সেটা হয় কিনা৷