1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে?

১৬ নভেম্বর ২০২২

দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিএনপির চলমান সমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। অনেক ধরনের বাধা বিপত্তির পরেও বিএনপি সফলভাবে কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়।

https://p.dw.com/p/4JbNr
ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশ
ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশছবি: Tarikul Islam/DW

এসব সমাবেশে মানুষের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসে, পাল্টা বক্তব্যের পাশাপাশি শুরু করে পাল্টা কর্মসূচিও।

আর তাই রাজনীতির মাঠে দেশের প্রধান দুই দল পাল্টাপাল্টি সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের ব্যাপারটি সামনে চলে আসে। বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়।

মাস দুয়েক ধরেই দেশের রাজনীতিতে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির সভা-সমাবেশ এবং তাতে বাধা দেওয়া ঘিরে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হলেও এখন মাঠ দখলের রাজনীতিতে গড়িয়েছে। এই উত্তাপ জাতীয় সংসদসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।

বিএনপি যা করতে চায়

ঢাকার বাইরে সফল সমাবেশের পর রাজধানীতে দলটি বড় সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে। বিপুল জনসমাগম করে বিএনপি শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। সরকারকে জানান দিয়ে চায় তার শক্তিমত্তা।

এই উদ্দেশ্যে তারা রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীদের জমায়েত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এটাই তাদের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতারা।

তবে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত হয় বিএনপির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার বক্তব্যের রেশ ধরে। গত ৮ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর এক দিন পর দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী লক্ষ্মীপুরে দলীয় কর্মসূচিতে বলেন, শিগগির তারেক রহমান দেশে আসবেন। তার পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে আটলান্টিক মহাসাগরের মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।

খুলনায় বিএনপির সমাবেশ
খুলনায় বিএনপির সমাবেশছবি: Kazi Fazla Rabby

দলীয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। তারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মকৌশলও ঠিক করা হবে। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা এবং নির্বাচনের পরে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে জাতীয় সরকারের কাঠামোও ঘোষণা করা হবে। মূলত ঢাকার সমাবেশ থেকেই এক দফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য বিভাগে যেভাবে আমরা সমাবেশ করেছি, ঢাকায়ও আমাদের সেভাবে সমাবেশ করার পরিকল্পনা। এখানে ঢাকার আশপাশের জেলা ও মহানগর থেকে লোকজন আসবে।

‘আমার মনে হচ্ছে, সরকার কিছুটা ভয় পেয়ে অন্য পথে যাওয়ার চেষ্টা করছে, এটা তাদের জন্য ভালো হবে না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে না দিলে এর সব দায়দায়িত্ব তাদের।‘

আওয়ামী লীগে যা করবে

বিএনপি একের পর এক সফল সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগ সভা-সমাবেশে না যেয়ে উপায় নাই। ক্ষমতাসীন দলের সারাদেশে বিপুল নেতাকর্মী রয়েছে। আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থাকলে তারা হতাশ হবে। তাই পাল্টা শক্তি দেখানোর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চায়, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশকিছু দিন ধরে বলে আসছেন ‘খেলা হবে'। এর মধ্যে দিয়ে তিনি বিএনপিকে একটা বার্তা দিয়েছেন। তার মতে, খেলা হবে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করে রাজনীতির মাঠ দখলেও।

তাই ঢাকার সমাবেশকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি যেন বড় ধরনের সমায়েত ঢাকায় করতে সক্ষম না হয় তার চেষ্টা করবে দলটি।

ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আয়োজিত সমাবেশে বিএনপিকে চ্যালাঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে। এ লক্ষ্যে ঢাকায় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারও শুরু হয়েছে।

সমাবেশের দিন বিএনপিকে সতর্ক পাহারায় রাখার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

গত রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের যে পরিণতি হয়েছিল, এর চেয়েও খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সরকার, আওয়ামী লীগ ও পরিবহণ খাতের সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সমাবেশ ঘিরে ক্ষমতাসীন দল নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ রাজধানীর অন্যতম বড় প্রবেশমুখ সাভারে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ওই দিন রাজধানীতে দুটি সমাবেশ করতে দলের অনুমতি চেয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন খাত, সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো পরিকল্পনা আঁটছে। ওই দিন পরিবহণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক পাহারায় থাকবে বলে জানা গেছে।

আশঙ্কা

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের ১৩ মাস আগেই মাঠ দখলের রাজনীতি এবং রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা আরও ঘনীভূত হবে।

১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছে তাতে সেদিন ঢাকায় চলাচল নিরাপদ হবে কিনা সেটা নিয়েও এখনই মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। অনেকের আশঙ্কা, আগামী ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তে রাজনীতির ময়দান আরও গরম হবে এবং বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটলে দেশের রাজনীতির গতিধারা আবার উল্টো দিকে ধাবিত হবে।

একেএ/কেএম (প্রথম আলো)