১৪ জনের ফাঁসি
৩০ জানুয়ারি ২০১৪২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা বা সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক হয়৷ তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার৷ আটকের দু'দিন পর ৩রা এপ্রিল কর্ণফুলি থানায় অস্ত্র চোরাচালান এবং আটকের ঘটনায় দু-দুটি মামলা করা হয়৷ এরপর ২০০৪ সালে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগে এই মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়৷ তদন্তের পর, ২০১১ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি৷ মামলাটিতে মোট আসামি করা হয় ৫২ জনকে৷ পরে আদালতে নতুন ১১ জনে বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করা হয়৷
চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক এস এম মজিবর রহমান বৃহস্পতিবার বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন৷ রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়৷ অন্যরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলাফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরল আমিন, ডিজিএফআই-র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই-র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.)সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআই-র মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএল-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক(প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ এবং হাজি আব্দুস সোবাহান৷ এঁদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া এবং নুরুল আমিন পলাতক৷ ৫২ জন আসামির মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারা ১৮ ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া তাঁদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানও করা হয়েছে৷ মামলার রায় ঘোষণার সময় পলাতক দু'জন ছাড়া সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷
পাবলিক প্রসিকউটর কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, এই মামলায় আসামি ছাড়াও কয়েকজন সাক্ষী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে পাঠানো হচ্ছিল৷ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই পারস্পরিক যোগসাজসে এই অস্ত্র পাচারের কাজ করছিলেন৷ জানা গেছে, যে পুলিশ কর্মকর্তা এই অস্ত্রের চালান আটক করেন তাঁকে তখন চাকরি থেকে বিদায় করা হয়৷
এদিকে বাবর এবং নিজামীর আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন৷ রায়ের পর আসামীর কাঠগড়ায় থাকা নিজামী শান্ত থাকলেও বাবর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান৷ বলেন, ‘‘আমি ন্যায় বিচার পাইনি৷ এই বিচারকের পরও বিচারক আছেন৷'' উল্লেখ্য, অস্ত্র আটকের পর বাবর তখন সাংবাদিকদের নিয়ে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন অস্ত্রের চালান দেখতে৷
যেসব অস্ত্র ছিল
২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল রাতে ১০টি ট্রাক থেকে মোট ৪৬৩টি বাক্স উদ্ধার করা হয়৷ এ সব বাক্স থেকে এমটিটি, এসএমজি, টমিগান উদ্ধার করা হয় ৭৯০টি, গ্রেনেড ২৭ হাজার, রকেট লঞ্চার ১৫০, ম্যাগজিন ৬২০ এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি গুলি পাওয়া যায়৷ এই অস্ত্র, গুলি এবং গ্রেনেড পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়৷
এ সব অস্ত্রের বেশিরভাগই চীন থেকে কেনা হয় এবং উলফার ট্রলারে করে বাংলাদেশের জলসীমায় আনা হয়৷ জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ভারতে উলফার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল এগুলি৷ পুরো পরিকল্পনা করা হয় ব্যাংককে৷ ঘটনার সময় নাকি পরেশ বড়ুয়াসহ একাধিক উলফা নেতা চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন৷