হ্যানয় শহরে দূষণ কমানোর উদ্যোগ
২৮ নভেম্বর ২০১৮শহরের মধ্যে মরুদ্যান
সপ্তাহান্তে হ্যানয় শহর বেশ সুন্দর হয়ে ওঠে৷ অবশেষে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাসও নেওয়া যায়৷ হান দাং সপরিবারে রবিবার শহরের মাঝে হোয়ান-কিয়েম লেকের ধারে বেড়াতে আসেন৷ এমনকি সুগার ক্যান্ডি বিক্রেতাও বেশ খোশমেজাজে রয়েছেন৷ কারণ শুধু সপ্তাহান্তেই লেকের চারিদিকের রাস্তাগুলিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে৷ পথচারীরা নির্বিঘ্নে সেখানে ঘোরাফেরা করতে পারেন৷ হ্যানয় শহরের বাসিন্দা হান দাং বলেন, ‘‘অন্যদিনের মতো দূষণ-মাস্ক পরতে হয় না, বাতাস উপভোগ করতে পারি৷ প্রত্যেক সপ্তাহান্তেই এখানে আসি৷ গাড়ি, মোটরসাইকেল থাকে না৷ অনেক সহজ ও আরামদায়ক৷''
বায়ুদূষণের সমস্যা
অন্য দিনের সঙ্গে সত্যি কোনো তুলনা চলে না৷হ্যানয় শহরে ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন৷ মোপেডই পরিবহণের প্রধান মাধ্যম৷ তবে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে৷ এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান নেই৷ তবে শহরে যানবাহন এবং বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে৷ হান দাং-ও মোপেড চালান৷ তাঁর মতে, বাসে করে কাজে যেতে অনেক সময় লাগে৷ হ্যানয় শহরে বায়ুদূষণ কমাতে এক আন্তর্জাতিক টিমের সঙ্গে কাজ করেন তিনি৷
কিন্তু বায়ুর মান আসলে কতটা খারাপ? এখনো পর্যন্ত পরিবেশ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ ১০টি পরিমাপ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে৷ নতুন একটি যোগ করা হচ্ছে৷ ভিয়েতনাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সেটি তৈরি করেছেন৷
প্রযুক্তিগত সহায়তা
নতুন ও উন্নত সেন্সর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জার্মানি থেকে দুই সহকর্মীও এসেছেন৷ তাঁরা জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর কর্মী এবং ভিয়েতনামের সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন৷ বায়ুদূষণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পাট্রিক ব্যুকার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে এমন এক যন্ত্র কাজে লাগানো হচ্ছে, যার ব্যয় কম৷ সেটি আগেই পরীক্ষা করা হয়েছে এবং চটজলদি বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসানো চলে৷ ফলে শহর কর্তৃপক্ষ অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিভিন্ন জায়গায় বাতাসের মান পরীক্ষা করতে পারে৷''
পৌর কর্তৃপক্ষ চাপের মুখে রয়েছে৷ গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে৷ পাতাল রেল তৈরির কাজ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে৷ হাতেগোনা কয়েকটি আধুনিক ও দ্রুতগতির বাস রাজপথে নামলেও তার ফলে গাড়ির সংখ্যা কমছে না৷ কিছু ব়্যাডিকাল পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে৷ যেমন পৌর কর্তৃপক্ষ ২০৩০ সালের মধ্যে হ্যানয় শহরে সব মোপেড নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে সে বিষয়ে কারো আগ্রহ নেই৷
দূষণ পরিমাপের অবকাঠামো
হ্যানয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মোবাইল ডিভাইস পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা দিয়ে সরাসরি যে কোনো যানের দূষণ মাপা সম্ভব৷ অদূর ভবিষ্যতে এক ধরনের দূষণ পুলিশ বাহিনী এমন যন্ত্রের সাহায্যে অবৈধ যান শনাক্ত করে সেগুলি রাজপথ থেকে দূর করতে পারবে৷ সেটা সম্ভব হলে হ্যানয় শহরের মানুষের জন্য বড় পরিবর্তন আসবে৷ হান দাং বলেন, ‘‘জানি না, মোটরসাইকেল বন্ধ করতে হলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে৷ সত্যি জানি না৷ আমাদের প্রচার অভিযান, যোগাযোগ প্রস্তুত করতে হবে৷''
সেই লক্ষ্যে জিআইজেড পরিবেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রেখে চলেছে৷ তবে জার্মান সংস্থা শুধু পরিকল্পনা করতে ও উপদেশ দিতে পারে৷ কর্তৃপক্ষকেই সেই সব পদক্ষেপ কার্যকর করতে হবে৷ পরিবেশ সুরক্ষা দপ্তরের চি লু থি থান বলেন, ‘‘প্রথমত, শহর কর্তৃপক্ষকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার অভিযানের আয়োজনকরতে হবে, যাতে নাগরিকরা গণপরিবহণ ব্যবস্থার সুফল বুঝতে পারেন৷ তবে অবকাঠামো ও গণপরিবহণ ব্যবস্থার আরও অনেক উন্নতি করতে হবে৷''
পুরানো যান বাতিল
পরিমাপের ব্যবস্থা নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু এখনো কীসের অভাব রয়েছে? প্রকল্পের সমন্বয়ক টাংমার মারমন বলেন, ‘‘দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে বর্তমান পরিবহণ কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন বা গাড়ির ইঞ্জিন ওভারহল বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে৷ ফলে মানুষকে কিছু ব্যয় করতে হবে৷ জার্মানির মতো ভিয়েতনামেও মানদণ্ড নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষ ও পেট্রল-ডিজেলের নির্দিষ্ট মান স্থির করা যেতে পারে৷''
হাতে আর বেশি সময় নেই৷ শহর বেড়েই চলেছে৷ জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মোপেডের সংখ্যাও৷ ভবিষ্যতের হ্যানয় শহর কেমন দেখতে হবে, তার আভাস প্রতি সপ্তাহান্তেই হোয়ান-কিয়েম লেকের ধারে দেখা যায়৷ সেখানে সবকিছু শান্ত, চারিদিকে সবুজের সমারোহ, বাতাসও নির্মল৷
মিশায়েল ভেৎসেল/এসবি